র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার করতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তাব দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়টি তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ওয়েন্ডি শারমেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বরোপ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বৈঠকের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি (বিশেষত বেসরকারি কলকারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন ওয়েন্ডি শারমেন।
ওয়েন্ডি শারমেনের সঙ্গে আলোচনায় র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করতে বাংলাদেশের উদ্যোগকে ভেস্তে দেবে কী না তা নিয়ে ঢাকা উদ্বিগ্ন। নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে র্যাব ও সংস্থাটির কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত থাকা এবং সংস্থার কর্মপ্রণালী সংশোধনের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় আংশিক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনায় নিতে পারে।
একই দিন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সুমনা গুহ রায়ের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেন পররাষ্ট্রসচিব। এ সময় তিনি র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা যায় কী না, তা বিবেচনার জন্য আহ্বান জানান। অন্যদিকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান সুমনা গুহ রায়।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোন প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয়েছে, ওয়েন্ডি শারমেনের কাছে তা ব্যাখ্যা করেছেন মাসুদ বিন মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি এতে কোন বিচ্যুতি আছে কি না তা নির্ধারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। এ তথ্য ওয়েন্ডি শারমেনকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব।
শ্রম অধিকার নিয়ে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব জানান, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। এজন্য আইএলও এবং ইইউর সঙ্গে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, সবকিছু রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে ওয়েন্ডি শারমেন শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছার প্রশংসা করেছেন। তিনি বেসরকারি কারখানাগুলোয় ট্রেড ইউনিয়ন চালুসহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে চলমান সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আয়োজিত পরবর্তী গণতান্ত্রিক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতা নিয়েও কথা বলেছেন।