মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (সিএফআইএসএস) যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে।
র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের কাউন্সিলর শন ম্যাকিনটস বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ হচ্ছে, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পস্ট বার্তা দেওয়া ও দায়বদ্ধতা উৎসাহিত করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় শন ম্যাকিনটস আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, এ নিষেধাজ্ঞা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু আমরা মনে করি না যে, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কের সংজ্ঞা নির্ধারিত হবে। আমরা আমাদের সম্পর্কের যে বিভিন্ন দিক আছে, সেটি এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ হিসেবে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছে। তবে আমি কারণ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। আমি যেটি বলতে চাই, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সমমনা অংশীদারদের সামনে প্রদর্শনের সুযোগ আছে। সামনে গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় আসর বসবে। তখন দেখা যাবে, বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মোবিন চৌধুরী বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা দরকার। সীমিত সম্পদ নিয়েও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা মানবতা দেখিয়েছি। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ উত্তর ভিয়েতনাম সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে অখুশি করেনি। কারণ আমাদের অবস্থান তাদেরকে আমরা ব্যাখ্যা করেছিলাম।’
ঢাকা ট্রিবিউনের এডিটর ইন চিফ জাফর সোবহান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যহত রাখতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নির্ধারিত হবে না। উভয় দেশের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে এখন আলোচনা করা দরকার। প্রতিটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক ধরনের সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার বদলে নীতি সহায়তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হলে ভালো হয়।’
ঢাকা ট্রিবিউনের এডিটর ইন চিফ জাফর সোবহান ও সিএফআইএসএসের চেয়ারম্যান কমোডর (অব.) মোহাম্মাদ নুরুল আবসার বৈঠক সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক লাইলাফুর ইয়াসমিন।