দেশে তৈরি হয়েছে রেসিং কারটি। বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রাংশ কিনে এবং বিদেশ থেকে ইঞ্জিন আমদানি করে তা বানান একদল শিক্ষার্থী। এই গাড়ি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তাঁরা।
বিশ্বব্যাপী যন্ত্র প্রকৌশলীদের সংস্থা (আইমেকই) আয়োজিত ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট’ রেসিং কার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গাড়িটি বানিয়েছেন আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। দলটির নাম ‘টিম প্রাইমাস’। আইমেকই ২১তম আসরের প্রতিযোগিতায় নিজেদের উদ্ভাবন নিয়ে অংশ নেবেন তাঁরা।
১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নর্থ হ্যাম্পটনশায়ারের সিলভার স্টোন সার্কিটে এ প্রতিযোগিতা হবে। শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে অনুষ্ঠিত ২০টি আসরে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। প্রথমবারের মতো তাঁরাই এতে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিযোগিতার জন্য তাঁরা ফর্মুলা রেসের আদলে গড়া একটি গাড়ি বানিয়েছেন। গাড়িটির নাম তাঁরা দিয়েছেন-‘এমএইচকে ১৯’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী ম্যাক রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আইমেকই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ভাবছিলেন তাঁরা। এ বছরের মার্চ মাস থেকে গাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে রাজধানীর সিদ্দিকবাজার ঘুরে ঘুরে গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশ কিনে ফেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস থেকে শেখা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তাঁরা গাড়িটি বানিয়ে ফেলেন জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই। এরপর তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য।
রোজারিও বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার শর্ত হচ্ছে গাড়িতে ৬০০ থেকে ৭০০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির (সিসি) ইঞ্জিন লাগবে। এর জন্য শিক্ষার্থীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে ভারত থেকে ইঞ্জিন দেশে আনেন গত ২৭ জুন। এরপর রেসিং কার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এবার বাকি পরীক্ষামূলক চালানো (টেস্ট ড্রাইভ)। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় গাড়ির নকশা এবং গতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বিচারকেরা। আমরা এমন একটি রেসিং কার তৈরি করছি, যা কম তেলে বেশি দূরত্ব যেতে পারবে।’
>বিশ্বের ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেসিং কার প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। অর্থসংকটে যাওয়া অনিশ্চিত বাংলাদেশের দলটির।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই দুজন এই প্রতিযোগিতায় গাড়ি চালাবেন। গাড়ির গতি এবং চালকদের দক্ষতার ওপর বাংলাদেশের দলের সফলতা নির্ভর করবে। ৩১ জনের এই দলটিতে পরামর্শক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির যন্ত্রকৌশল বিভাগের দুজন শিক্ষক। বাকি সবাই শিক্ষার্থী। তাঁরা জানিয়েছেন, গাড়িটি তৈরি করতে তাঁরা প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাঁদের আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকা দরকার।
দলের সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, ‘টাকার অভাবে আমাদের যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। রেসিং কারটি জাহাজীকরণ (শিপমেন্ট) করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অন্তত ২৫ লাখ টাকা পেলেও গাড়িটিকে আমরা প্রতিযোগিতার আসরে প্রদর্শনীর জন্য পাঠাতে পারব।’ টাকার জন্য বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
আইমেকইয়ের ওয়েবসাইট ঘুরে জানা গেল, ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল খাতকে প্রযুক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য আইমেকই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ক্যারিয়ার গঠন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তরুণ সৃষ্টিশীল প্রকৌশলীদের উদ্বুদ্ধ করা এই প্রতিযোগিতার একটি উদ্দেশ্য। প্রতিযোগিতার আরেকটি লক্ষ্য—দ্রুতগতির জ্বালানিসাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করা। গত বছর এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটি। এবারের আসরে ২০টি দেশের ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের দলের পরামর্শক ও আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. খোরশেদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা দেশের জন্য গৌরবের। প্রতিযোগিতার অর্জন দেশের সম্ভাবনাময় অটোমোবাইল শিল্পের ওপর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, এ আয়োজনে বিভিন্ন মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মেধাবী যন্ত্র প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় তারা।