মন্দিরে হামলার অভিযোগে আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ
মন্দিরে হামলার অভিযোগে আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ

রাধাকান্ত জিউ মন্দির দখলে হামলা হয়েছে, অভিযোগ ইসকনের

ঢাকার ওয়ারী থানার লালমোহন স্ট্রিটের শ্রীশ্রী রাধাকান্ত জিউ ইসকন মন্দির দখলের চেষ্টায় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় মন্দিরের মালামাল লুট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। হামলা থামাতে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেছে।

‘বাংলাদেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক মঠ-মন্দিরে হামলা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ শিরোনামে আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশ।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক ডিআইজি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ বলেন, ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় মন্দিরে একদল দুষ্কৃতকারী হামলা চালায়। হামলাকারীরা মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের দেয়াল ভাঙে, মূর্তিসহ মন্দির সংস্কারের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। হামলাকারীরা পুলিশের সামনে নীহার হালদার, সুমন্ত্র ও রাজীব ভদ্রকে মারধর করে বলেও অভিযোগ করেন সত্য রঞ্জন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়, এ ঘটনার সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এ নিয়ে ইসকন থেকে ওয়ারী থানায় অভিযোগ করা হলেও মামলা নেওয়া হয়নি। পরে কোর্টে মামলা নেওয়া হয় এবং থানাকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।

এক সাংবাদিক বলেন, একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, রাধাকান্ত জিউ মন্দিরের সম্পত্তি নিয়ে তিনটি মামলা হয়। আদালতে মামলা তিনটি খারিজ হয়ে যায়। সেই সূত্রে তারা মন্দিরের জায়গা দখল করতে যায়।

এর জবাবে রাধাকান্ত জিউ ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ রূপানুগ গৌর দাস বলেন, ‘এই মন্দির ২০০ বছরের প্রাচীন দেবোত্তর সম্পত্তি। অবৈধ দখলদার যে জায়গা নিয়ে ঝামেলা, এর বাইরেও মন্দিরের তিন কাঠা জায়গা দখল করে আছেন। দেবোত্তর সম্পত্তি কখনো হস্তান্তরিত হয় না। তাঁকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিই। তিনি আরও সম্পত্তি দখলের হুমকি দেন। তাই কেউ যেন মন্দিরের জমিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারেন, এ জন্য ১৪৫ ধারায় মামলা করি, এটি কোনো সিভিল মামলা নয়। এই মামলার মেয়াদ এক বছর। এক বছর পর মামলা খারিজ হতেই পারে। এই মামলা খারিজ হওয়া মানে সম্পত্তি দখলে চলে আসা নয়।’

কিসের ভিত্তিতে তিনি ভোগদখল করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ রূপানুগ গৌর দাস বলেন, ‘তাঁদের দাবি, আমাদের সাবেক সেবায়েত রাধাকান্ত বণিকের মা রাণুবালা বণিক তাঁর মা সালেহা বেগমের কাছে এই জমি বিক্রি করেছেন। তাহলে বিক্রির দলিল কোথায়? তিনি একটা দলিল দেখাচ্ছেন, যা নিবন্ধিত নয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের হিন্দু আইনে নারীরা সম্পত্তির অধিকারী হন না। তাহলে রাণুবালা কী করে জমি বিক্রি করেন।’ এ বিষয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২০১০ সাল থেকে রাধাকান্ত জিউ মন্দিরটি পরিচালনা করছে ইসকন।

দেশে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও সম্পত্তি দখল করার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যদি এক-দুজনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, তাহলে হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে দুষ্কৃতকারীরা সাহস পেত না। শাস্তির ভয় থাকলে একটা মন্দির ভাঙত না, বিগ্রহ ভাঙত না, সম্পত্তিও বেহাত হতো না।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। মঠ-মন্দিরের জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে।’

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।