কোনো দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা তুরস্কের গভীর রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন। এই সহযোগিতাকে তুরস্ক দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারির প্রেক্ষাপট থেকে দেখে থাকে। তাই অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তুরস্ক কোনো রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেয় না। ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান এ কথা বলেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় তুরস্কের দূতাবাসে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) সদস্যদের সঙ্গে দুই দেশের সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেশটির রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
এ সময় মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে তুরস্ক সব সময় যৌথ উদ্যোগ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের অগ্রগতির প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে অস্ত্র কিনতে গেলে সব সময় রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এটা মাথায় রেখেই নিজস্ব চাহিদা মেটাতে গিয়ে তুরস্ক প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে শুরু করে। তুরস্ক যে দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার চুক্তি করে, তাদের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ সেবা নিশ্চিত করে; রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেয় না।
বাংলাদেশের কাছে তুরস্ক কী ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করছে এই নিয়ে কথা বলতে অপারগতা জানিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে চাইছি না।’ তবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য তুরস্ক মাল্টিলঞ্চার রকেট সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণে আগ্রহ রয়েছে তুরস্কের।
দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমন্বিত অংশীদার হতে চায় তুরস্ক। বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই সহযোগিতার অংশ হিসেবে চলতি মাসের শেষে তুরস্কের নৌবাহিনীর প্রধান বাংলাদেশে আসছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কাছে তুরস্কের সমরাস্ত্র বিক্রির আগ্রহের কথা ঘোষণা করেন। তখন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তুরস্কের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো। দামেও সুলভ। এগুলো কেনার জন্য কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। তুরস্ক প্রতিরক্ষা খাতে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উৎপাদনে রাজি আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুনে আঙ্কারায় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়। ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত কেনাকাটা শুরু হয়েছে। গত মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আট দিনের সরকারি সফরে তুরস্ক যান। সে সময় দুই দেশের সহযোগিতার অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা যায়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিকাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহফুজ মিশু। বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনউদ্দীন।