কোথায় নেই চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা! কোনো বাড়ির ময়লা রাখার জায়গায়, কোনোটির ভূগর্ভস্থ জলাধারে, এমনকি বাড়ির ভেতরে থাকা পানির কলসি ও বালতিতেও পাওয়া গেছে তাদের।
এই চিত্র ধানমন্ডি, কলাবাগান, পরীবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডের ১১টি বাড়ির। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এসব এলাকার ১৮টি বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে ১১টিতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে। পরিবাগ বাদে অন্য তিন এলাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায়ও রয়েছে।
এ পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, এমন অবস্থা যদি শহরের অন্যত্রও হয়, তাহলে নগরবাসীর মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া খুব কঠিন হবে। এর সঙ্গে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে।
গত বছরের মার্চ-এপ্রিল মাস থেকেই ঢাকার ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৭৯ জন। মারা যান ৮ জন। চলতি বছর গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শহরজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। নগরবাসীর মনে ফিরিয়ে এনেছে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর আতঙ্ক।
গত মার্চে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০০টি এলাকায় জরিপ চালিয়ে ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডি ১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড ও বেইলি রোড এবং শান্তিনগর।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, গত বছরের মতো পরিস্থিতি যেন আবার তৈরি না হয়, সে জন্য এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে এখন থেকেই সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও জোরদার করা উচিত।
এ বছর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপ থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করে ডিএসসিসি। এর মধ্যে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার গত সোমবার ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, কমিটি গত ৮ এপ্রিল ধানমন্ডি ১ নম্বর সড়কের সাতটি বাড়ি পরিদর্শন করে তিনটি বাড়িতে মশার লার্ভা পান। ২২ এপ্রিল কলাবাগান এলাকার ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া যায়। কমিটির সদস্যরা ৬ মে পরিবাগ ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার পাঁচটি বাড়ি পরিদর্শন করে চারটি বাড়িতেই মশার লার্ভা পেয়েছেন।
যেসব জায়গায় লার্ভা পাওয়া গেছে, তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ ছিটিয়ে তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাড়ির মালিক, তত্ত্বাবধায়কদের ভবনের চারপাশ, আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। লার্ভা পাওয়া তিনটি বাড়ির ভেতরে নির্মাণকাজ চলছিল, এসব নির্মাণকাজের প্রকৌশলীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ক্র্যাশ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। মশা নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। নিজের বাড়ির আঙিনা, চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি বরাদ্দ বাড়ালেও মশার যন্ত্রণায় রাজধানীবাসী অতিষ্ঠ। গত অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ব্যয় করেছে ৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসসিসির বরাদ্দ ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।