রোজমি জাহান ওরফে রাফা (১৩) ও তানভীর আহমেদ (৯) রাজধানীর বিএএফ শাহীন স্কুলের শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকালে বাবার সঙ্গে স্কুলে যেত। মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় বাবার সঙ্গে দুই ভাইবোনের কতশত গল্প। হঠাৎ প্রতিদিনের সেই গল্পে ছেদ পড়ল। এখন আর বাবার সঙ্গে স্কুলে যাওয়া হবে না তাদের। ট্রাকের ধাক্কায় তাদের বাবা চিরদিনের জন্য এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়ে বুধবার বেপরোয়া গতির ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন রোজমি ও তানভীরের বাবা মাকসুদুল কায়সার (৪৫)। তিনি বিমানবাহিনীর জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মাকসুদুলের স্ত্রী জুই আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পর তিনি (স্বামী) কর্মস্থলে যেতেন। স্কুল ছুটি হলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরতেন।
জুই আক্তার বলেন, বুধবার সকালে দুই সন্তানকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাকসুদুল। হাইকোর্ট মোড়ের কদম ফোয়ারার কাছে পৌঁছালে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক পেছন থেকে তাঁর মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে মাকসুদুল মারা যান।
দুর্ঘটনায় রোজমি ও তানভীর আহত হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোজমির অবস্থা গুরুতর। তবে তানভীর আশঙ্কামুক্ত হলেও তার ডান পা ভেঙে গেছে।
রোজমি বিএএফ শাহীন স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে এবং তানভীর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মাকসুদুল কায়সার সপরিবার যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচায় থাকতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মাকসুদুলের স্ত্রী ও সহকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মাকসুদুলের লাশ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানভীরকে ওয়ার্ড থেকে ট্রলিতে করে বের করা হয়। লাশবাহী গাড়িতে থাকা বাবার নিথর দেহ দেখালে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। পরে জানাজার জন্য মাকসুদুলের লাশ নেওয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসে।
আহত ভাইবোন রোজমি ও তানভীরকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে। স্বজনেরা জানিয়েছেন, সেখানেই ওদের চিকিৎসা করা হবে।
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে নিরাপদ সড়ক আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় ট্রাকচালককে আসামি করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ট্রাকচালককে আটক করা যায়নি।