রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেলা ১টা ৮ মিনিট। এ হাসপাতালে সিট না পেয়ে মোটরসাইকেলে করে করোনায় আক্রান্ত স্ত্রী নাসরিন সুলতানাকে নিয়ে রওনা হচ্ছেন আবদুর জাহেদ রাজু। নাসরিনের শরীর এতটাই খারাপ লাগছিল যে তিনি ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। মোটরসাইকেলে উঠতেই পড়ে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা রাজুকে পরামর্শ দিলেন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু নাসরিনের অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে, তাই রাজু সিদ্ধান্ত নিলেন দ্রুত হাসপাতালে নিতে হলে তাঁর নিজস্ব মোটরসাইকেলই ভালো হবে। কিন্তু মোটরসাইকেলে বসেই ঢলে পড়ছেন নাসরিন। পাশের ব্যক্তিরা আবারও পরামর্শ দিলেন, ‘তাহলে ওনাকে আপনার সঙ্গে ওড়না দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান।’
তাঁদের এ কথায় সম্মতি দিয়ে রাজু তাঁর এক স্বজনের সহায়তায় স্ত্রী নাসরিনকে নিজের সঙ্গে বেঁধে নিলেন।
সিট পাওয়ার আশায় তাঁরা রওনা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের উদ্দেশে। কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসরিনকে দেখে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বিধি বাম! বিএসএমএমইউ হাসপাতালেও নেই সিট।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে চেয়ারে শুয়ে পড়েন নাসরিন। রাজু পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছেন, ‘...কী করবেন, কোথায় নিয়ে যাবেন..?’ আক্ষেপ করে রাজু জানালেন, ‘নাসরিনের অক্সিজেনের মাত্রা কমে এসেছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাঁর। এ মুহূর্তে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারলে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে। এখানে আমি নিজে গিয়ে দেখে আসলাম, সিট ফাঁকা আছে, কিন্তু তারা ভর্তি নিল না। আমার ক্ষমতা বা অনেক টাকা থাকলে এখানেই সিট ম্যানেজ করতে পারতাম।’
সিট পাওয়া যাবে শুনে পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যাবেন।
আবারও ওই একইভাবে স্ত্রী নিয়ে রওনা হলেন মহাখালীর উদ্দেশে। ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসক দেখে ভর্তি করাতে বলেন। কিন্তু সিট ফাঁকা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় ৩০ মিনিট পর সিট পাওয়া যায়। তবে নাসরিনকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, আপাতত তাঁর অক্সিজেন সুবিধাসম্পন্ন বেডের প্রয়োজন নেই। তাই অক্সিজেন সুবিধা ছাড়াই বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভর্তি হন নাসরিন।
কেবল নাসরিন সুলতানাই নন, তাঁর মতো আরও অনেকে আজ মুগদা মেডিকেলে ভর্তি হতে এসেছিলেন। কিন্তু সিট খালি না থাকায় অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ অপেক্ষা করছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে, কেউ চিকিৎসা পাওয়ার জন্য ছুটছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানান, বেশ কিছুদিন ধরে করোনা রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল থেকে নতুন রোগী ভর্তি করানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।