ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে বসে খাচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের কাছে মায়ের লাশ দাফনের জন্য অর্থসাহায্য চান জাহিদ নামের এক রিকশাচালক। শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করার আগে জাহিদের মায়ের লাশ দেখতে চাইলেন। লাশ দেখানোর নাম করে জাহিদ তাঁদের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ঘোরেন। একপর্যায়ে জাহিদের চাতুরি বুঝতে পেরে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনাটি গতকাল রোববার রাতের। জাহিদ নামের ওই ব্যক্তিকে তাঁর রিকশাসহ শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। সে সময় জাহিদের সঙ্গে মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
আরাফাত চৌধুরী নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে ঘটনার শুরু। আরাফাত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’ নামের শিক্ষার্থীদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের স্বেচ্ছাসেবক। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় টিএসসিতে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় লোকটি (জাহিদ) আমার কাছে এসে বলেন, তাঁর মা মারা গেছেন। লাশটি ঢাকা মেডিকেল থেকে গ্রামের বাড়ি নাটোরে নেওয়া ও দাফনের জন্য সাত হাজার টাকা সাহায্য প্রয়োজন।’ তখন আরাফাত সাহায্যপ্রার্থী ওই রিকশাচালককে বলেন, তিনি তাঁকে (জাহিদ) সাহায্য করবেন। সে সময় ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে লাশ দেখতে চান আরাফাত। আরাফাত বলেন, ‘আমরা কয়েকজন তাঁকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাই। মেডিকেলের ২৫২ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর মায়ের লাশ থাকার কথা বললেও সেখানে লাশটি ছিল না।’
আরাফাত আরও বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে লাশ দেখাতে না পেরে জাহিদ বলেন, লাশ পোস্তগোলায় আছে। তাঁর সঙ্গে আমরা পোস্তগোলায়ও যাই। সেখানেও ঘুরে কিছু না পেয়ে তাঁরই কথায় সেখান থেকে আগা সাদেক রোডে যাই। এরপর যাই ঢাকা মেডিকেলে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় তিনি আমাদের এভাবে ঘোরাতে থাকেন। যখন আমাদের কাছে পরিষ্কার হয় যে ওই ব্যক্তি একজন প্রতারক, তখন সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে তাঁকে আমরা টিএসসিতে নিয়ে আসি। সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, টাকার জন্য তিনি মায়ের মৃত্যুর মিথ্যা অজুহাত দিয়েছেন। পরে আমরা তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করি। তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এর আগেও একই অজুহাতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। পুলিশে সোপর্দ করার আগে তাঁর পকেট থেকে আমরা নেশা করার সরঞ্জাম পাই।’
গতকাল রাত ১০টার দিকে জাহিদকে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক ও নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রইছ হোসেনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রইছ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ওই ব্যক্তি (জাহিদ) থানা হেফাজতে আছেন। তাঁর রিকশাটিও থানায় আছে।
আজ সোমবার তাঁকে আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে।