স্বাস্থ্য পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম থাকেন রাজধানীর মহাখালীতে। চাকরি করেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তিনি ভীষণ দুর্ভোগে পড়েছেন। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দেড় ঘণ্টা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেও আমিনুল কোনো গণপরিবহনে উঠতে পারেননি।
সকাল ১০টার দিকে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। জানান, তিনি সদরঘাট যাবেন। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে কেরানীগঞ্জের একটি গ্রামে যাবেন। কিন্তু পরিবহন পাচ্ছেন না। ওদিকে সহকর্মীরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। আমিনুলের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ।
পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আমিনুল বলেন, ‘সরকার তাঁকে মাসে যাতায়াত ভাতা দেয় ২৫০ টাকা। এদিকে এক দিনে লাগছে ৫০০ টাকা। এসব কেউ দেখে না।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ রোববারও রাজধানী ঢাকায় পালিত হচ্ছে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট। মহানগরীর ভেতরে আজও চলাচল করছে না কোনো বাস। রাজধানী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না আন্তজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন।
আজ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা পড়েছেন বেশ ভোগান্তিতে। সড়কে বেসরকারি বাস চলছে না। সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে। কিন্তু ভাড়া বেশি। অনেকে উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অফিসে গেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড়। বিআরটিসি বাস চলছে। তবে সংখ্যায় কম। সে তুলনায় যাত্রীর ভিড় বেশি। অনেকে হেঁটে অফিসে যেতে দেখা গেছে। কর্মজীবী নারীদের জন্য ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
রুনা রহমান বেসরকারি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর অফিস মতিঝিলে। মহাখালীর নাবিস্কো থেকে তিনি নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রুনার সঙ্গে নাবিস্কোতে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। রুনা বলেন, গতকালও তিনি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে অফিসে গেছেন। ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। এটি তাঁর নিয়মিত ভাড়ার অন্তত ৫ গুণ।
রুনা বলেন, তিনি স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী। যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে অফিসে যাওয়া-আসা কি সম্ভব?’
অবশ্য ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের একজন চালক বলেন, রাস্তায় যানজট বেশি। গন্তব্য পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। এ জন্য ভাড়া একটু বেশি।
নাবিস্কো মোড়ে দায়িত্বরত তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের একজন সদস্য গণপরিবহন না থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন।
জুয়েল মিয়া তাঁর শিশুপুত্র হুসাইনকে (৫) নিয়ে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এসেছেন সকালে। ছেলেকে জলাতঙ্কের টিকা দিয়ে তিনি অপেক্ষা করছিলেন বিআরটিসি বাসের জন্য। জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হেমায়েতপুর থেকে একটি ট্যাক্সি নিয়ে এসেছিলেন। ভাড়া গুনতে হয়েছে ৬০০ টাকা। অথচ বাসে এলে তাঁর ভাড়া লাগত ৩০ টাকা। ২০ গুণ অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার পর তিনি আর অটোরিকশায় যেতে পারছেন না। কারণ, তাঁর কাছে এত টাকা নেই।
জুয়েল আরও বলেন, ‘পরিবহনমালিকেরা জনগণকে জিম্মি করেছে। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে জনগণের পকেট ফাঁকা হচ্ছে। এভাবে আর কত দিন চলবে?’