নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে নাগরিকদের সচেতন করতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার মহাখালীতে সচেতনতামূলক পরামর্শ সভা করেছে সংস্থাটি।
মিরপুরের সেকশন–১১–এর বাসিন্দা আফরোজা খানম বলেন, ‘বাসার ছয়তলায় থাকি, কিন্তু মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নাই। সিটি করপোরেশন কাজ করে বললেও সে কাজের ফল আমরা পাচ্ছি না।’
গুলশান সোসাইটির মহাসচিব শুক্লা সারওয়াত সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলশানে মশার সাংঘাতিক উপদ্রব। এটি একটি অভিজাত এলাকা। সে হিসেবে আশা করেছিলাম হয়তো মশার উপদ্রব থেকে স্বস্তি পাব।’ তিনি বলেন, এ এলাকায় সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজ আছে। কিন্তু মশার উপদ্রব ঠেকাতে সে কাজ যথেষ্ট নয়।
শুক্লা সারওয়াত সিরাজ আরও বলেন, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকা লেক দিয়ে ঘেরা। লেকগুলো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এতে মশার ওষুধ দিলেও তা কাজ করে না।
মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্প এলাকায়ও আছে মশার উপদ্রব। সেখানকার বাসিন্দা শহীদ উদ্দিন বলেন, গত এক সপ্তাহে তিনি এলাকার মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।
উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে মশার উপদ্রব অনেক বেশি বলে জানান সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা। এখানকার ১১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি মঈন আহমেদ বলেন, এ এলাকার ৯ ও ১১–এর মাঝখানে উত্তরা লেক। লেকটিতে এলাকার বর্জ্য এসে পড়ে। এ কারণে সব সময় আবর্জনায় পূর্ণ থাকে। এটি মশার প্রজননস্থল হয়ে পড়েছে।
মশার উপদ্রবের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে ডিএনসিসি মশকনিধনে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। এর ফলে মশার উপদ্রব কমেছিল। তবে গত দুই সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চলার সময় কিছু কাজে ব্যাঘাত হওয়ায় মশা কিছুটা বেড়েছে। তবে আবার কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। সংস্থার ১০টি অঞ্চলে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক সভা করা হবে। ইতিমধ্যে দুটি সভা করা হয়েছে। এ মাসের ১৫ তারিখর মধ্যে সব কটি অঞ্চলে এ কাজ শেষ হবে।
ডিএনসিসির মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়সংলগ্ন মার্কেটে গতকালের সচেতনতামূলক সভা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সভায় ডিএনসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তা, কাউন্সিলর ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অংশ নেন। এর আগে গত মঙ্গলবার উত্তরায় অঞ্চল–১–এ সচেতনতামূলক সভা হয়।
সভায় এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, বংশবিস্তারসহ ডেঙ্গুর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সিডিসির সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা খাদিজা সুলতানা। এতে বলা হয়, ১২৬টি দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ২৫০ কোটির বেশি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছে। এতে আরও বলা হয়, গত আগস্টে দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় ৫৩ হাজার। যা অতীতের সব সময়ের চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ বছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
সভায় এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কার্যক্রম সম্পর্কে জানান সংস্থার উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার।
ডিএনসিসি বলছে, গত বছর ডিএনসিসির ‘চিরুনি অভিযান’ পরিচালনার ফলে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় এক হাজার বিঘা জলাশয়, ডোবা, পুকুরের জলজ আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ কাজ এখনো চলছে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোমিনুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করবে ডিএনসিসি। কোথায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে, ঘনত্ব বেশি, কোন বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি—এ তথ্যগুলো এখন আমরা জানি। এসব তথ্য–উপাত্ত কাজে লাগিয়ে বছরের শুরু থেকে কাজ করলে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচা যাবে।’
ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল–৩) মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিয়াকত আলী, ২৪ নম্বরের মো. সফিউল্লাহ, ৩৬ নম্বরের তৈমুর রেজা এবং ২৫ নম্বরের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড–৮–এর নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মিতু আকতার।