কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে আঘাতকারী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ভাস্কর্যবিদ্যা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সভ্যতাবিধ্বংসী যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক ভাস্কর্য বিরোধিতার নামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ও ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে শিল্পকর্মের শক্তিশালী মাধ্যমগুলো, বিশেষ করে ভাস্কর্যবিদ্যা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সামগ্রিকভাবে বলতে হবে, এটি শিল্পকলা, সভ্যতা ও মানবিক বিকাশের একটি অসাধারণ মাধ্যম। সেটি যখন হুমকির মুখে পড়ে, বাধাগ্রস্ত হয়, সেটির বিকাশ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন মানবতা পর্যুদস্ত হয়, মানবিক গুণাবলি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়। এমন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। আমার ধারণা, গণমানুষের সম্পৃক্ত হওয়ার সময় বোধ হয় এখনো আসেনি।
গণমানুষ সম্পৃক্ত হলে তার রূপ হবে কঠিন থেকে কঠিনতর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা যখন কোনো কাজে অংশগ্রহণ করবেন, তখন আপামর মানুষের অংশগ্রহণ হবে। আমরা চাই না, কোনোক্রমেই এ ধরনের একটি অনভিপ্রেত ঘটনাকে সামগ্রিকভাবে বহু মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে, কারণ, সেটির ফলাফল হবে অত্যন্ত কঠিন, ভয়ানক ও ভয়ংকর। সে জন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে, সরকার এই ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী অশুভ চক্র, যারা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে সভ্যতা ও মানবতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিক। সেটিই মূলত এখন সময়ের দাবি।’
মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, কুষ্টিয়ায় যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করেছে, লক্ষ রাখতে হবে যে এর পেছনে ইন্ধনদাতা ও কিছু অশুভ চক্র আছে। তারা সম্মিলিতভাবে এ ধরনের অপকর্ম ও অপপ্রয়াস চালিয়ে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরির হীন প্রয়াসে লিপ্ত আছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক চক্রের আস্ফালন চলছে। মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছেন। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হামলা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। এই হামলা দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির ওপর হামলা।
হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম উল্লেখ করে মাকসুদ কামাল বলেন, বাবুনগরীর বয়স সত্তর কিংবা তার আশপাশে। একাত্তরে তো এই জাতির পক্ষে তাঁর দাঁড়ানোর কথা। তিনি তো দাঁড়াননি, বরং বিরোধিতা করেছেন। এঁরা জাতির পিতাকে হত্যা করার পরও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ধ্বংস করতে পারেননি। আজকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস করেছেন। সংবিধান কিংবা রাষ্ট্র যাঁদের ফতোয়া দেওয়ার অধিকার দেয়নি, সেই ধর্ম ব্যবসায়ী অপশক্তিরা যাত্রাবাড়ীতে একত্র হয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। এটিও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ ও ষড়যন্ত্র৷
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সাদেকা হালিম, আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন মো. রহমতউল্লাহ, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, সদস্য অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, কে এম সাইফুল ইসলাম খান ও জিনাত হুদা, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ এবং টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘আমাদের করণীয়গুলো স্পষ্ট। যারা ধর্মের নামে ফতোয়া দিচ্ছে, তাদের সম্পর্কে মহামান্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাষ্ট্র-জনগণ ও সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’