ড্যাপ

ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ থেকে সরছে রাজউক

একরপ্রতি জনসংখ্যা নির্ধারণের পরিকল্পনা। ভবনের কত ইউনিটে কতজন থাকবেন, সে হিসাবে নকশা অনুমোদন।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) আবাসিক ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা থাকছে না। তার বদলে ড্যাপের চূড়ান্ত খসড়ায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলেছিল। আবাসিক ভবন সর্বোচ্চ আটতলার অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে কিছু মহল থেকে বাধা আসে। সে জন্য ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একরপ্রতি জনসংখ্যা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্তকে যথাযথ মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, নগরীকে বাসযোগ্য করতে জনসংখ্যার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ জন্য ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ বিশ্বজুড়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাচ্ছে রাজউক।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে নগরীর বাসযোগ্যতার চেয়ে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের পক্ষ থেকেই ভবনের উচ্চতা নির্ধারণের বিরোধিতা করা হয়েছিল। তাঁদের চাপের কাছে রাজউক নতি স্বীকার করেছে। তারা ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ মানাতে পারেনি, এখন একরপ্রতি জনসংখ্যা নির্ধারণ কতটুকু মানাতে পারে, সেটা দেখার বিষয়।’

‘প্রিপারেশন অব ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) ফর ডিএমডিপি এরিয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে ড্যাপ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ২০ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনা গত জুন মাসেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর (ডিসেম্বর পর্যন্ত) অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

ড্যাপ প্রণয়নের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের নগর–পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটিতে প্রস্তাবগুলো ঈদের আগেই উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে পারিনি। ঢাকার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল, ভার্চ্যুয়ালি সভা করে এর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। করোনা পরিস্থিতি শেষ হয়ে গেলে যথাসম্ভব দ্রুত এই সভা করা হবে।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে নগরীর বাসযোগ্যতার চেয়ে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের চাপের কাছে রাজউক নতি স্বীকার করেছে।
আদিল মুহাম্মদ খান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)

যেভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে জনঘনত্ব

রাজউক কর্মকর্তারা জানান, একরপ্রতি জনসংখ্যা নির্ধারণের বিষয়টি অনুমোদন পেলে কেউ আবাসিক ভবন করতে গেলে কত ইউনিটে কতজন বাস করবে, সেই হিসাবে নকশা অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে ইউনিটের আকার কত হবে, সেটা নির্ধারণ করা হবে না। যেমন, ১ একরে ২০ ইউনিট পাওয়া গেল। সেই ২০ ইউনিট কেউ ১০ তলা ভবনে করতে পারে, আবার কেউ ৫ তলায় করতে পারে।

ঢাকার কোন এলাকার জনঘনত্ব কত হবে, তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের আগে জানাতে রাজি নন প্রকল্প পরিচালক। তবে শহরের জনঘনত্ব নিয়ে গত অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিআইপি। তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একরপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ জন থাকার কথা। ক্ষেত্রবিশেষে তা ১২০ জন পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে ঢাকা শহরে প্রতি একরে বাস করেন প্রায় ৪০০ জন।