ব্রিটিশ সেনারা নেই, টিকে আছে মিল ব্যারাক

.

দুই পাশে নদী। সবুজ গাছপালা। নদীর পারে একটিমাত্র ভবন। তবে আকারে বেশ বড়সড়। ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকের এই ছবিটা পাওয়া গেল। ১৮৭০ সালে ছবিটি তোলা। আলোকচিত্রীর নাম নেই। পুরান ঢাকার প্রখ্যাত লেখক নাজির হোসেনের কিংবদন্তিরঢাকা, শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকাকোষসহ ঢাকার বিভিন্ন গ্রন্থে এই মিল ব্যারাকের কথা রয়েছে। সেসব ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, উনিশ শতকের প্রথম ভাগে জনৈক ইংরেজ বুড়িগঙ্গার তীরে সূত্রাপুরে ‘ঢাকা সুগার ওয়ার্কার্স কোম্পানি’ নামে একটি চিনির কল চালু করেন। কারখানাটি অল্প দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেলে উইলিয়াম ফলি নামে আরেক ইংরেজ কলটি কিনে ‘ফ্লাসিস ফ্লাওয়ার মিল’ নামের একটি ময়দার কারখানা বানান। তবে ১৮৫৭-৫৮ সালে ভারতবর্ষে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হলে ঢাকায় বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ সেনাদের আনা হয়। তখন তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় এই মিলে। এমনকি বিদ্রোহ দমনের পরও মিলের বৃহৎ গুদামঘরগুলো সংস্কার করে সেখানে সৈন্যদের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তখন থেকে এটি মিল ব্যারাক নামে পরিচিত। ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ সরকার মিল ব্যারাক ও আশপাশের কয়েকটি ইমারতকে ক্যান্টনমেন্ট ঘোষণা করে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলা-আসাম প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। তখন থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত আসাম ও বেঙ্গল পুলিশের উপপরিদর্শক এবং কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় হিসেবে মিল ব্যারাক ব্যবহার করা হয়। ১৯১২ সালের পর এটি ঢাকা জেলা পুলিশের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে রাজারবাগে পুলিশ লাইন চলে গেলে মিল ব্যারাকে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন স্থাপিত হয়। ১৯৮৪ সালে মিল ব্যারাকের পূর্বাংশে বাংলাদেশের একমাত্র ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। কেউ যদি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানার পেছনে যান, তিনি এই মিল ব্যারাক এলাকা ঘুরে আসতে পারবেন। তবে এখন আশপাশে উঠে গেছে বহু ভবন। প্রায় মৃত ধোলাই খাল। তবে মিল ব্যারাকের পেছনেই বুড়িগঙ্গা টিকে আছে এখনো।

লেখা: শরিফুলহাসান, ছবি: জিয়াইসলাম