ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ভবনের একাংশ বৃদ্ধাশ্রমের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু সেখানে থাকা কার্যালয় সরাচ্ছেন না ডিএসসিসির ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজী। এতে বৃদ্ধাশ্রমের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। জায়গা ছাড়তে ডিএসসিসি কাউন্সিলরকে চিঠি দিলেও তিনি গা করছেন না।
ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, বস্তিবাসী মানুষের আর্থসামাজিক কল্যাণে সদরঘাটে ২০০২ সালে ছয়তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের দিকে। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ভবনটি টানা ৯ বছর ফাঁকা ছিল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুর রহমান মিয়াজী ভবনটির দ্বিতীয় তলার প্রায় এক হাজার বর্গফুট জায়গায় কার্যালয় তৈরি করেন। এরপর থেকে তিনি সেখানে নিয়মিত অফিস করছেন।
ডিএসসিসির সচিব দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত অক্টোবরে ভবনটি বঙ্গবন্ধু জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র নামে চালু করার উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। এ জন্য চলতি অর্থবছরে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তারই অংশ হিসেবে বেসরকারি সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি করে সংস্থাটি। চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় তলায় বৃদ্ধাশ্রম করবে বেসরকারি সংস্থাটি। ভবনের তৃতীয় তলায় প্রাথমিকভাবে পথশিশুদের ডে কেয়ার ইউনিট চালু করা হয়েছে। ধীরে ধীরে ভবনের ওপরের তলাগুলোও ব্যবহার করা হবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের উত্তর-পূর্ব কোণে ছয়তলা ভবনটির অবস্থান। গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে পৃথক চারটি কক্ষ নিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয়। এর মধ্যে বড় একটি কক্ষে বসেন ওয়ার্ডের সচিব ইন্দ্র ভূষণ দেবনাথ। গতকাল কাউন্সিলরের কক্ষসহ অন্য দুটি কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়।
কাউন্সিলরের কার্যালয়ের পূর্ব পাশে এক সারিতে তালা মারা সাতটি কক্ষ দেখা যায়। সাজেদা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, এসব কক্ষসহ পুরো তলায় বৃদ্ধদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, আজ সোমবার বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু কাউন্সিলর তাঁর কার্যালয় সরিয়ে না নেওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান মিয়াজী বলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর কার্যালয় তৈরি করতে কোনো জায়গা দেয়নি ডিএসসিসি। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে ডিএসসিসির ভবনটিতে কার্যালয় তৈরি করেন। এখন ডিএসসিসি বিকল্প জায়গা ঠিক করে দিলে তিনি কার্যালয় সরিয়ে নেবেন। অন্যথায় কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এই ভবনে কাউন্সিলর কার্যালয় থাকলে সাজেদা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৪–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান বলেন, ভবনটির ছয়টি তলার আয়তন প্রায় ৭৭ হাজার বর্গফুট। পুরো জায়গাই সাজেদা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়েছে। এখানে তারা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ডিএসসিসি শুধু তদারক করবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলরের কার্যালয়টি সরিয়ে নিতে মাসখানেক আগে তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি কার্যালয়টি সরাননি।