শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও এর ফল প্রকাশ এবং নিয়মিত দাপ্তরিক কার্যক্রম চললেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অসহযোগ অব্যাহত রয়েছে৷ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতিও অটল৷ ফলে মাঠের আন্দোলনের ইতি ঘটলেও অচলাবস্থা কাটেনি৷
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল ও সেখানে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষার মতো একাডেমিক কার্যক্রমগুলোতে অংশ নেবেন না৷ শিক্ষক সমিতি বলছে, উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেননি৷
৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী৷ এরপর আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১১ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম৷ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সব দাবির বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের শর্তে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করেন৷
পরে সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ১৬ অক্টোবর বুয়েট মিলনায়তনে গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষার্থীরা৷ তবে মামলার অভিযোগপত্র এলে সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক অসহযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন৷
১৯ অক্টোবর বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আবরার হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ এসব পরীক্ষা নিতে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করার কথা ভাবছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ৷
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে৷ তবে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে৷ একাডেমিক কাউন্সিল শিগগিরই পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করবে৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আমরা কথা বলছি৷’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে থাকা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান বলেন, তাঁরা সর্বশেষ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখনো তাতে অটল আছেন৷ আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যাঁদের নাম আসবে, বুয়েট থেকে তাঁদের স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত তাঁরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না৷
এ বিষয়ে বুয়েট উপাচার্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন যথারীতি বন্ধ পাওয়া য়ায়। গতকাল বিকেলে কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর সাক্ষাৎ মেলেনি৷
বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরা অটল৷ এ জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা যোগাযোগও করছি৷ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে আমরা তাঁকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছি, যদিও তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেন না৷’