শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

বিষণ্নতার শহরে তারুণ্যের ক্ষোভ

ঢাকার অনেক কিশোর-তরুণ বারবারই বিক্ষোভে নামছে। বিক্ষোভের পেছনে যে মন, তা বিষণ্ন। কেবল বাসভাড়াই নয়, পথে-ঘাটে লাঞ্ছনা, অপমান, এলাকার প্রাণস্পন্দনহীন পরিবেশ, ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায়ও ভুগছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর শান্তিনগরে
ফাইল ছবি

কিশোরী ফাহমিদার কলেজ শুরু নয়টায়, কিন্তু বেরোতে হয় ভোর ছয়টায়। সরু গলিতে রিকশা পাওয়া যায় কম, তা ছাড়া শ্রমজীবী এলাকা বলে সকালের জনস্রোতে হাঁটাও কঠিন। দিনভর বৃষ্টিতে রাস্তাও ডুবে যায়। বৃষ্টি-কাদায় কলেজের সাদা পোশাক নিয়ে খুব ভয়ে থাকতে হয়। এত সব পেরিয়ে আসতে হয় সাভারের আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজে আসতে তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। এভাবে দিনে চার–পাঁচ ঘণ্টা তার কাটে গণপরিবহনে। যাওয়া-আসায় বাসভাড়া আগে লাগত ৬০ টাকা করে ১২০ টাকা। রিকশাভাড়া মিলিয়ে এক দিন কলেজে আসা-যাওয়া করতে যার প্রায় ১৫০ টাকা খরচ, তার মা পোশাক কারখানার অপারেটর, বাবা থাকেন আলাদা। কেন এত দূরে আসতে হয়? কারণ, সাভার-আশুলিয়ায় তেমন ভালো ও কম খরচের কলেজ নেই। শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার নিয়ম চালু হওয়ায় স্বস্তির কথা জানাল উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের (নতুন) মেয়েটা।

শহরতলির জীবন মানেই কষ্টে টিকে থাকা

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়াসহ সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনে সামিল ছিল বৃষ্টি। বলছিল সে, ‘বাসে অনেকবারই বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছি। আমার বন্ধুরা কেউ ধামরাই, কেউ গাজীপুর থেকেও কলেজে আসে। এত টাকা দিয়ে যাতায়াত করে পড়ালেখা চালানো কি সম্ভব? এ কারণে আমার পাশের ঘরের মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিল!’ এসবের মধ্যেও সংগ্রাম করে পড়ালেখা চালাচ্ছে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা।

সেই সংগ্রামও দুর্ঘটনা নামক অবহেলার শিকার হয়ে হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। এ বছরের ১১ মাসেই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৩৭ শিক্ষার্থী; এর মধ্যে নভেম্বরেই ৫৪ জন (প্রথম আলো, ৫ ডিসেম্বর)। গত ২৯ নভেম্বর বাসচাপায় মালিবাগের চায়ের দোকানির পুত্র মাঈনুদ্দিন ইসলামের (দুর্জয়) মৃত্যুতে রামপুরা এলাকায় তীব্র জনবিক্ষোভও হয়। এর পাঁচ দিন আগে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীচালিত ময়লার গাড়ির নিচে চাপা পড়েন নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। তাঁর বাবা নীলক্ষতের বইয়ের দোকানি, বসবাস নিম্নবিত্ত প্রধান কামরাঙ্গীরচরে। এসব পরিবারের সন্তান শুধু স্বপ্ন নয়, ভবিষ্যতের বিনিয়োগ। সন্তানের হাত ধরে সমাজের ওপরের স্তরে ওঠার কষ্টের যাত্রা এভাবে শেষ হয় চাকার তলায়।

গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ মেহেদিকে (২৩) মেরুল-বাড্ডা থেকে বনানী ক্যাম্পাসে আসতে-যেতে দিনে রিকশা–বাসে খরচ করতে হতো ১৬০ টাকা। অনেক সময় ভাড়া দেওয়ার পর দুপুরের খাবারের টাকা থাকত না। ‘আমার এলাকায় উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পেলে কষ্ট করে কি আর বনানীতে যেতাম?’ বলছিলেন তিনি।

বাসস্থানের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এলাকাগত দূরত্ব বড় ভোগান্তি হয়ে উঠেছে ঢাকার অনেক শিক্ষার্থীর জন্য। ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বৈষম্য ও নাগরিক সেবার ভয়াবহ ঘাটতিকে সমস্যার কারণ হিসেবে দেখছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা মনে করেন, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরাশা তৈরি হওয়া সম্ভব। শহরতলির জীবন মানেই কষ্ট করে টিকে থাকা।

বাসরুট যত দূর, তত দূর ঢাকা

ঢাকার ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল মধ্য ও উচ্চমধ্যবিত্তের আবাসনের কাছে। কিন্তু ঢাকার আয়তন ১৯৯১ সালের সালের তুলনায় উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে তিন গুণের বেশি ছড়িয়েছে। ঢাকা মেগাসিটির আয়তন এখন প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে যদিও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাসরুট ও বাসের সংখ্যা। যত দূর লোকাল বাসের রুট, তত দূরই এখন ঢাকা। যে বাস আগে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যেত, এখন তা যায় টঙ্গী ছাড়িয়ে গাজীপুর পর্যন্ত। আগে সাভার-নবীনগর পর্যন্ত ছিল যেসব বাসের চলাচল, তারা যাচ্ছে চন্দ্রা পর্যন্ত। এদিকে বছিলা পার হয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর, ওদিকে পূর্বাচল পেরিয়ে কাঞ্চন সেতু, আরেক দিকে নারায়ণগঞ্জ-রূপগঞ্জ, সেদিকে কুড়িল, নতুন বাজার, বালুঘাট ইত্যাদি।

নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ সরে যাচ্ছেন বাসরুটের শেষ গন্তব্যের এলাকার দিকে। সেখানে বাসা ভাড়া কম। কিন্তু কাজ ও শিক্ষা-চিকিৎসা এবং কেনাকাটার জন্য আবার আসতে হচ্ছে মূল ঢাকায়। ফলে বেড়ে যাচ্ছে যাতায়াতের খরচ। দূরের স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের হাতে চলাচল বাবদ প্রতিদিন ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় অভিবাবকদের। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, বাড়ছে জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচ। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বাড়তি বাসভাড়ার চাপ। এরই যেন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে হাফ ভাড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে।

নিম্নবিত্ত এলাকায় প্রাণস্পন্দনের অভাব

বৈষম্য ও দারিদ্র্য যে বেড়েছে, তা উঠে এসেছে বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন ২০২২-এও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ১ শতাংশ ধনীর আয় মোট জাতীয় আয়ের ১৬.৩ শতাংশ (১০ ডিসেম্বর, ২০২১, প্রথম আলো)।

বৈষম্য নগরজীবনে কী ছাপ ফেলছে, তা নিয়ে কথা হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদের সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দেশের আন্তনগরে যেমন বৈষম্য আছে, তেমনি ঢাকা শহরেও বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, আবাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, উন্মুক্ত স্থানসহ অন্যান্য নাগরিক পরিষেবার বেলায় ভীষণ বৈষম্য রয়েছে। ফলে এক মহল্লার ছেলেমেয়েদের অন্য এলাকার ভালো স্কুলে যেতে হয়। অথচ প্রতিটি এলাকায় মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহরের অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
বিভিন্ন এলাকায় মানসম্পন্ন স্কুল, স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ শহরের যানজট ও যাতায়াত খরচ কমিয়ে দিতে পারে। প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ ও গণপরিসর ছেলে–মেয়ে থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে আরও অনেক বেশি প্রাণোচ্ছল করে তুলতে পারে। তা না করায় শহরতলির জীবনে প্রাণস্পন্দনের অভাব দেখা যায়।’

‘স্বপ্ন ধরে রাখতে পারছি না আমরা’

কিশোর-তরুণদের বারবার রাজপথে নেমে আসার পেছনে সার্বিক বিষণ্নতার দিকটিও দেখতে চান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জুলফিকার আলী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে গবেষণার ভিত্তিতে তিনি জানিয়েছিলেন, ঢাকার ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। ওই গবেষণার জের ধরে বর্তমানে ঢাকার তরুণদের মানসিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে বিষণ্নতার আনুপাতিক হার ওপরতলার চাইতে বেশি। কিশোর-তরুণেরা বিশেষ করে মেয়েরা বেশি সংবেদনশীল। ঢাকায় বসবাসের নেতিবাচক দিকগুলো এদেরই আক্রান্ত করে বেশি। চলাচলের ভোগান্তি ও সময়ের অপচয়, বেশি ভাড়া ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য পরিবারের অভিভাবক থেকে ছেলেমেয়েরা সবাই উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত হয়ে থাকে। তরুণদের মধ্যে হতাশার মাত্রাটা বেশি।

মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন বড়রাও কেউ কেউ বলেন, পড়ালেখা করে কী হবে, চারদিকে এত এত বেকার! আমার বন্ধুদের কয়েকজন পড়ালেখা ছেড়ে কাজে লেগে গেছে। যারা নিম্নবিত্ত পরিবারের, তাদের অনেকের আশা অনার্সের আগেই শেষ হয়ে যায়, অবস্থাপন্নরা আরও আগায়। স্বপ্ন ধরে রাখতে পারছি না আমরা। স্বপ্ন আর কী, বিসিএস দেওয়া। অনেকেই ইন্টারে থাকতেই বিসিএসের জন্য খাটতে শুরু করে।’

প্রায় একই রকম হতাশা উঠে আসে মেরুল-বাড্ডার ছাত্র আবদুল্লাহ মেহেদির কণ্ঠে, ‘বন্ধুদের বড় অংশটাই বিষণ্ন হয়ে থাকে। কোনো পরিস্থিতিই মধ্যবিত্তদের পক্ষে নয়। ভালো ফল করলেই আমাদের প্রজন্ম বিদেশে যেতে চায়, তা না হলে চায় সরকারি চাকরি। দেশ নিয়ে ভরসা করতে পারছি না আমরা।’

বিক্ষোভ বেশি নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকায়?

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০২১ এবং ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থলের দিকে তাকালেও বোঝা যায় শহরতলি, প্রান্ত এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত বসতির কাছেই বিক্ষোভ হয়েছে বেশি। যেমন মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, আজিমপুর, মালিবাগ, মোহাম্মপুর ইত্যাদি। মধ্যবিত্ত এলাকা হলেও মূল রাস্তা থেকে একটু ভেতরে গেলেই পরিবেশ ক্রমেই মলিন হয়ে ওঠে। সরু ও ভাঙাচোরা সড়ক ও গলি। গায়ে–গায়ে লাগানো বাড়িতে রোদ-বাতাস আসে না। সরকারি ওয়াসার পানির লাইন যদি থাকেও, সব সময় তা দিয়ে পানি আসে না। অধিকাংশ শহরতলিতে বহুদিন হলো গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বেশি খরচের তরল গ্যাসের সিলিন্ডারই রান্নার সহায়। মাদকের বাজারও এসব এলাকায়ই বেশি। এই বিষণ্ন পরিবেশে বড় হওয়া উঠতি বয়সের ছাত্রছাত্রীদেরই বারবার দেখা যায় শিক্ষা ও জীবনযাত্রার আন্দোলনে।

স্থপতি ও পরিবেশকর্মী ইকবাল হাবীব মনে করেন, গণপরিবহনে অরাজকতার পেছনে শ্রেণিবৈষম্যও রয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘বাচ্চারাও এটা বোঝে যে তার চলাচল ও তার জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। রামপুরায় যে থাকে, হাজারীবাগে যে থাকে, তারা কি ভালো পরিবেশ, গতিশীল যোগাযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়? তারা দেখছে ভালো পোশাক, ভালো শিক্ষা, ভালো পরিবহন কিছুই তার নাগালের মধ্যে নেই। এসব বঞ্চনারই বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি কিশোর-তরুণদের আন্দোলনে। তারা বলতে চাইছে, এ শহরে আমারও অধিকার আছে, এটা আমাদেরও শহর।’ ঢাকার নটর ডেম কলেজের ছাত্র অনির্বাণ সরকারের কণ্ঠেও একই সুর, ঢাকায় চলাচল অস্বস্তিকর।

পথে-ঘাটে অশোভন ও নির্দয় আচরণ

ঢাকার রাস্তায় ও ছোট–বড় পরিবহনে সবচেয়ে বেশি যাঁদের দেখা যায়, তাঁরা কর্মজীবী তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থী। সংখ্যার বিচারে নগরযন্ত্রণার শিকারও হন তাঁরাই বেশি। ২০১৮ সালে প্রথম আলো পরিচালিত তারুণ্য জরিপ বলছে, ৮২ শতাংশের বেশি তরুণ ভালো জীবনযাপন ও পেশার উন্নতির জন্য দেশ ছাড়তে চান। রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য তীব্র বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। পিপিআরসির গত আগস্ট মাসের একটি গবেষণার সূত্র ধরে তিনি বলেন, বৈষম্যের পাশাপাশি প্রকট হয়ে উঠছে শহরতলির অমানবিক জীবন। বাসে, পথে, প্রতিষ্ঠানে এবং পাড়া-মহল্লায় যাঁর একটু ক্ষমতাবান অবস্থান আছে, তিনিই অন্যদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করছেন। মানুষের আত্মসম্মানবোধকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। নারীদের জন্য জনপরিসরে চলাচল করা বিশেষভাবে পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে। একদিকে ভয়ের পরিবেশ, অন্যদিকে সার্বিক জীবনযাত্রা নিয়ে অসন্তোষ। পরিবারের মধ্যে তরুণেরাও এর ভুক্তভোগী। ক্ষমতাচর্চা ও অশোভন আচরণের মধ্যে কষ্টের সঙ্গে টিকে থাকতে থাকতে তাঁরা বিষণ্ন ও অতিষ্ট।

গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনা ও বাসভাড়ায় হাফ পাসের দাবিতে রাজধানীর ফার্মগেট মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা

কলেজছাত্র শরীফুলও বলছিলেন, ‘রাস্তাঘাটে চলতে গেলে আপনার সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটল। থানায় গিয়েও বিচার পাবেন না। তখন কেউ কেউ কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে যায়, ভাবে একটা গ্রুপ থাকলে ক্ষমতাসীন দলের বড় ভাইদের সঙ্গে মিশলে আমারও একটা দাম থাকবে। আমাদের এলাকার খেলার একমাত্র মাঠের অর্ধেকটাই ক্লাবের দখলে। তখন হাতে থাকে শুধু মুঠোফোন। ছোট ভাইরাও মুঠোফোনে আসক্ত। “অরা যাইব কই, অগো খালি খালি ফাঁপর দেই আমরা।”’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হাফ পাস ও সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে হলেও প্রচ্ছন্নভাবে এটা যাবতীয় অশোভন ও নির্দয় আচরণের প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান।

‘মনটা খারাপ হয়ে যায়’

আশুলিয়ার ছাত্রী ফাহমিদা বলছিল, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে ভয় পাই। বাসা থেকে বের হলে এলাকার বখাটেরা টিটকারি করে। অটোতে উঠলে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। এখানে আমাদের সাহস দিতে কেউ কিছু করে না। উল্টো নিরুৎসাহিত করে।’ ফাহমিদার মতো পূর্ব তেজতুরী পাড়ার শাহজালালও গিয়েছিল বাসে হাফ পাসের আন্দোলনে। তার বাবা একটি সরকারি হাসপাতালের ক্যানটিন চালাতেন, করোনাকালে বেকার হয়েছেন। মা কাজ করেন একটি মেডিকেল ছাত্রীদের হোস্টেলে।

উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহজালালের কণ্ঠেও আক্ষেপ, ‘আসলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ঢাকায় এত খরচ। মা-বাবাকে হিমশিম খেতে দেখি। এখানে পড়ালেখা না করে গ্রামে পড়লে বোধ হয় ভালো হতো। বন্ধুদের কেউ কেউ চলেও গেছে গ্রামে। এ রকম চললে ভবিষ্যৎ আর কীভাবে ভালো হবে?’