চলমান বিধিনিষেধে দোকানপাট-শপিং মল খোলা থাকছে রাত আটটা পর্যন্ত। এ নির্দেশনায় সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারের পরেই রাজধানীর শপিং মল-মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় একেবারেই কম ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গণপরিবহন কম থাকায় ক্রেতারা মার্কেটে আসতে পারছেন না।
সোমবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, কোনো মার্কেটেই ক্রেতাদের ভিড় নেই। রাত আটটার পর দোকানগুলোর ঝাঁপি নেমে যায়। অধিকাংশ দোকানেই সন্ধ্যার পর বেচাকেনা হয়নি বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
নিউমার্কেটে কসমেটিকসের দোকান আছে আবুল কাশেমের। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে একদমই ক্রেতা নেই উল্লেখ করে তিনি বললেন, গণপরিবহন চালু না থাকায় মানুষ মার্কেটে আসতে পারছে না। কিছু মানুষ রিকশা করে অবশ্য আসছে। তবে বেচাকেনা একদমই হচ্ছে না। সন্ধ্যায় কিছু না বিক্রি করেই দোকান বন্ধ করতে হয়েছে তাঁকে।
নিউমার্কেটের ভেতরে নিচতলায় ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। তবে নিউ সুপার মার্কেটের (দক্ষিণ) ভবনের দোতলা ও তিনতলার কয়েকটি দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল। এই ভবনের একটি শার্ট ও টি–শার্টের দোকানি মো. আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যায় ইফতারের পর তিনি দুটি শার্ট বিক্রি করতে পেরেছেন। এভাবে বিক্রি হলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
জানতে চাইলে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাত আটটা পর্যন্ত বিপণিবিতান খোলা রাখা হচ্ছে। তবে বিপণিবিতানে বেচাকেনা একদমই ধীরগতিতে চলছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। এ কারণেই হয়তো মানুষ বিপণিবিতানে কম আসছে।
নিউমার্কেটে প্রবেশের ফটক মোট চারটি। সরেজমিনে দেখা যায়, চারটি ফটকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করার অবকাঠামো আছে, কিন্তু একটিও সচল নয়। ক্রেতারা ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেও তাপমাত্রা মাপার বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য হচ্ছে, জীবাণুনাশক নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ আছে। অনেকে ওই জীবাণুনাশক স্প্রের কাঠামোর মধ্য দিয়ে যেতে চান না।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দোকানিদের কী কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির এ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি দোকানকে বলা আছে, মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তাদের কাছে পণ্য বিক্রি না করতে। ক্রেতাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দোকানদারদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া আছে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির এ বক্তব্যের মিল পাওয়া গেল না বিপণিবিতানটিতে ঘুরে। অন্তত ১২টি দোকান ঘুরে দেখা গেল, ১০টি দোকানেই কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। মার্কেটে অধিকাংশ ক্রেতার মুখে অবশ্য মাস্ক ছিল। তবে বিক্রেতাদের অনেকের মাস্ক থুতনিতে নামানো ছিল।
মুখের মাস্ক নামিয়েই পর্দা কেনার জন্য দরদাম করছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা নীলুফা ইয়াসমিন। মাস্কের দিকে ইঙ্গিত করতেই তিনি লজ্জা পেলেন। বললেন, ‘আমি জানি, মাস্ক এভাবে রাখাতে ঝুঁকি আছে। কিন্তু মার্কেটের ভেতরে এত গরম। সব সময় মুখে মাস্ক তুলে রাখা যায় না।’
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিধিনিষেধের কারণে ৫ এপ্রিল দোকানপাট-বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যায়। পরে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে বৈশাখের বিক্রির জন্য ৯ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ দেয় সরকার। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচ পর্যন্ত দোকানপাট ও বিপণিবিতান চালু আছে। তবে ১৪ এপ্রিল তা বন্ধ হয়ে যায় সরকারি নির্দেশনায়।
পরে ব্যবসায়ীদের আবারও দাবির মুখে গত রোববার থেকে সারা দেশে দোকানপাট ও শপিং মলগুলো চালু হয়। সেদিন রাতেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজধানীতে শপিং মল–দোকানপাট রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। পরে প্রজ্ঞাপন হয়, রাত আটটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা যাবে।
নিউমার্কেট থেকে বেরিয়ে গাউছিয়া মার্কেটে এসে দেখা যায়, নিচতলার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় আছে। তবে মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোতে একদমই ক্রেতার আনাগোনা নেই। দোকানিরা চুপচাপ বসে আছেন।
গাউছিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট–সংলগ্ন ফুটপাতে অবশ্য ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল। গাউছিয়া মার্কেটের সামনের সড়কে ফুটপাতে চাদর বিক্রি করছিলেন ২৬ বছর বয়সী মো. রাজু। তিনি জানান, ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। তবে তিনি সন্ধ্যার পর দুটি চাদর বিক্রি করতে পেরেছেন। সাড়ে আটটার পর তিনিও বেচাকেনা গুটিয়ে ফেলেন।
রাতে খোলা থাকার প্রথম দিনে বিপণিবিতানে তুলনামূলক কম দর্শনার্থী এসেছে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বিপণিবিতানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কড়াকড়ি করে মানা হয়। প্রায় ৫০ জনের একটি মনিটরিং দল মার্কেটে ঘুরে ঘুরে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা তদারক করে।
বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান চৌধুরী রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে এখনো অনেক আতঙ্ক। এ কারণেই মার্কেটে দর্শনার্থী কম। রোজার মাসে সাধারণত মার্কেটে এক দিনে প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী আসে। সে তুলনায় আজ মার্কেটে অনেক কম দর্শনার্থী এসেছে।