সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা

বিটিআরসির খসড়া প্রবিধান পাস হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও থাকবে না

ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) খসড়া প্রবিধানটি পাস হলে বাক্‌স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও আর থাকবে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে অনলাইনে কোন ধরনের বার্তা বিনিময় হচ্ছে, সব দেখতে পারবে।

আজ শনিবার সকালে এক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

বিটিআরসি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রেগুলেশন-২০২১’ নামে একটি খসড়া প্রবিধান প্রকাশ করে। এই প্রবিধান নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মতামত প্রদানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৭ মার্চ করা হয়।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নতুন বিধিমালা, নীতিমালার কথা শুনলে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আইনটি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই মাস আগে। আইনটি করার ক্ষেত্রে সৎ উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিটিআরসির খসড়া প্রবিধানটি পাস হলে তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করবে বলে শঙ্কা এই আইনজীবীর।

সেমিনারে খসড়াটি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খসড়ার পটভূমিতে ‘মহান’ কথা বলা হলেও খসড়ার মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে পটভূমির কোনো মিল নেই। তাঁর মতে, প্রবিধানটি মূলত ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন ইন্টারনেট নীতির পরিপন্থী।

সচিত্র উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি দেখান কীভাবে খসড়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা নষ্ট করবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি খামে ভরে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন, যাতে চিঠি কেউ পড়তে না পারে।

মাহফুজুল হক বলেন, ইন্টারনেটে খামের কাজটি করে ‘ডাটা এনক্রিপশন’। কিন্তু খসড়াটি পাস হলে এটি আর থাকবে না। আদালতের অনুমতি ছাড়াই যে কারও বার্তা পড়তে পারবে বিটিআরসি, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন।

সমাপনী বক্তব্যে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসংক্রান্ত আইনটি করা হয়েছিল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য। কিন্তু এখন এটি সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিটিআরসির খসড়াটি পাস হলে মানুষের সাংবিধানিক অধিকারে পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনও বাধাগ্রস্ত হবে।

মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় এই ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে বক্তব্য দেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের আইন বিভাগের শিক্ষক নূরান চৌধুরীও। এতে শিক্ষক, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা যুক্ত ছিলেন।