বায়তুল মোকাররমের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন আহত হন।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পর বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিলে সংঘর্ষ বাধে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭২ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ আহত ব্যক্তি ইসলামি দলগুলোর নেতা-কর্মী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, নামাজে আসা সাধারণ মুসল্লিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১০ কর্মীও রয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের বেশির ভাগই মাথায়, পিঠে, হাতে কিংবা পায়ে চোট পেয়েছেন। কারও কারও ইটপাটকেলের আঘাতে মাথা ফেটে গেছে।
শুরুর দিকে আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ইসলামি বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা আসছিলেন। সঙ্গীরা আহত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের সময়ও মোদিবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় ডান হাতের কনুইয়ের নিচে দুটি হাড় ভেঙেছে মনির হোসেনের। তিনি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকায় দরজির কাজ করেন বলে জানান। মনির প্রথম আলোকে বলেন, নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে তাঁকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটান। হাসপাতালে হাতের প্লাস্টার করে তিনি চলে যান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমানকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে জরুরি বিভাগের গেটের বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাঁর পরনের পাঞ্জাবি রক্তমাখা ছিল। সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাসপাতালে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ। তাঁর সঙ্গে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা প্রথমে ক্ষমতাসীন দলের আহত এক কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। ওই কর্মীর বুকের একটি হাড় ভেঙে গেছে। ওই কর্মীর নাম শামীম হাসান।
তারেক সাঈদ ও তাঁর অনুসারীরা হাসপাতালে আসার পর উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের তাঁরা জেরা করছিলেন। জেরার একপর্যায়ে আহত একজনকে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে জরুরি বিভাগের ভেতর থেকে মারধর করতে করতে বাইরে নিয়ে আসেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে নিজেদের জিম্মায় নেন।
মারধরের শিকার ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের জিরিকপুর গ্রামে। ঢাকায় জুরাইনে পরিবারের সঙ্গে থাকেন এবং কুসুমবাগ কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার তাঁর একটি পরীক্ষা আছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়তে বায়তুল মোকাররমে এসেছিলেন। সংঘর্ষের ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। হুট করেই কিছু লোক হাসপাতালের ভেতরে তাঁকে মারধর শুরু করে।
শুধু বিপক্ষের লোকজনকে নয়, ভুল করে নিজেদের এক কর্মীকেও শিবিরকর্মী ভেবে মারধর করেন তারেক সাঈদের অনুসারীরা। পুলিশ ওই ব্যক্তিকেও নিজেদের হেফাজতে নেন। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্য কর্মীরা এসে মারধরের শিকার ওই ব্যক্তিকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে যাচ্ছেন। শুধু একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।
এই ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, শাহদাৎ হোসেন নামের একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। ওই ব্যক্তি ঢাকায় ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করতেন।
হাসপাতালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, বিক্ষোভকারীরা জামায়াত–শিবিরের লোকজন। এতে বিএনপির উসকানি ছিল। তারা হামলা চালায়। প্রতিহত করতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধে।