বাসের দরজা খুলছেই না, যাত্রীদের ক্ষোভ

বাসের সংখ্যা সীমিত ও আসন সীমিত হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারেননি বা বিলম্বে যেতে হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নিকুঞ্জের এয়ারপোর্ট রোড অবরোধ করেন ভুক্তভোগীরা
ছবি: সংগৃহীত

সকাল আটটায় বাসা থেকে বের হয়েছেন একটি আইটি ফার্মের কর্মকর্তা রেজাউর রহমান। তিনি যাবেন গুলশান-২-এ, তাঁর অফিসে। এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাসে তিনি উঠতে পারেননি। অবশেষে সকাল নয়টার পর তিনি কোনোমতে একটা বাসে উঠতে পাড়লেন। ভেতরে ঢুকে দেখলেন, সব কটি আসন যাত্রীতে ঠাসা। কারও মুখে মাস্ক আছে, কারও নেই। বাসচালকের সহকারীর মুখেও কোনো মাস্ক নেই।

রেজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে কোনো বাসের দরজা খুলছিল না। প্রতিটি বাসের আসন ভর্তি। গতবার করোনায় সব বন্ধ ছিল। পরে বাস চালু হলে পাবলিক বাসে দুই সিটে একজন করে গেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। এবার সবকিছু খোলা রেখে এই নিয়ম প্রতিদিন দুর্ভোগ বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, সকালে যাত্রাবাড়ীতে শত শত মানুষ অপেক্ষা করেছে বাসের জন্য। তাঁর জিজ্ঞাসা, এসব মানুষ কীভাবে অফিসে যাবে? ক্ষোভের সঙ্গে রেজাউর রহমান বলেন, ‘বাসমালিকেরা তো ঠিকই টাকা পাচ্ছেন। সমস্যা আমার মতো সাধারণ মানুষদের।’

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও বিশ্ব রোড, রামপুরার বিভিন্ন বাসস্টপ ও মোড়ে ছিল অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড়। বেশির ভাগ বাসের আসন পূর্ণ ছিল। বাসগুলোয় আসন পূর্ণ হয়ে গেলে চালকের সহকারীরা গেট লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। তবে বাসভাড়া নিচ্ছিল ৬০ শতাংশ বেশি।

এদিকে বাস না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশায় করে অফিসে যেতে বাধ্য হন। এ সময় মানুষের চাহিদার চাপে বেড়ে যায় এসব বাহনের ভাড়াও। কিছু না পেয়ে অনেককে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়।

সকালে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মতিঝিলে যাওয়ার বাসেই উঠতে পারেননি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার। অগত্যা তিনি বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা করে মতিঝিলের উদ্দেশে রামপুরা থেকে রওনা দেন। নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসস্টপে কত কত মানুষ যে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তা দিয়ে শাঁই শাঁই করে বাস চলে যায়। কেউ শেয়ারে রিকশা নিয়েছে, কেউ অটোরিকশা। রিকশাভাড়া প্রায় দ্বিগুণ দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করা তো অসম্ভব।’

দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে গণপরিবহনে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আজ থেকে কার্যকর হয়েছে। ৩০ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের জন্য এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত সোমবার গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশনা জারি করে সরকার। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাসমালিকেরা।

বাস-মিনিবাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনার পর বাসমালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায়।

বাসভাড়া বাড়লেও বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। আজ সকালে খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে নতুন বাজার গিয়েছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, আগে এইটুকু পথের জন্য ভাড়া নিত ১০ টাকা। আজকে নিল ২০ টাকা। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মানেন না বাসের চালক ও তাঁর সহকারী। আবু সালেহ বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বাসের প্রতিটি আসনেই যাত্রী ছিল। দাঁড়ানো যাত্রী ছিল দু–তিনজন। প্রতিটি মোড়ে সার্জেন্ট এলেই দাঁড়ানো যাত্রীদের বসিয়ে দিত। কী পরিমাণ কষ্ট মানুষের, না দেখলে বোঝানো যাবে না।’

দেশে গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সরকার। দুই মাস সেভাবে চলেছিল গণপরিবহন। তখনো বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।

চলতি বছরের মার্চ থেকে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গতকাল মঙ্গলবার ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন না করার নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য গণপরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধির নামে বাসে যাত্রী সীমাবদ্ধ করায় ক্ষুব্ধ হন সাধারণ যাত্রীরা। বাসের সংখ্যা সীমিত ও আসন সীমিত হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যেতে পারেননি বা বিলম্বে যেতে হয়েছে। এর প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নিকুঞ্জের এয়ারপোর্ট রোড অবরোধ করেন ভুক্তভোগীরা। কিছুক্ষণ পর অবশ্য সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা। খিলক্ষেত এলাকায় এ সময় যানজট হয়।