রাজধানীর বাংলামোটরে বাসচাপায় এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় ওয়েলকাম পরিবহনের চালক ও মালিককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকা থেকে বাসচালক জাকির হোসেন (৪০) ও ঢাকার সাভার এলাকা থেকে বাসটির মালিক মো. আলম ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬ জুন সকালে বাংলামোটর সড়কে মোটরসাইকেলযোগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার পথে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসচাপায় পুলিশ কনস্টেবল কোরবান আলী মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় চালক ও বাসমালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে বাসটির হেলপার এখনো পলাতক।
র্যাবের ভাষ্য অনুসারে, বাসটি ছিল ফিটনেসবিহীন। দৈনিক চুক্তিভিত্তিক বাসটি চালাচ্ছিলেন জাকির হোসেন। ঘটনার দিন বেপরোয়া গতিতে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্য কোরবান আলীকে চাপা দেয় বাসটি। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব বলছে, চালক জাকির ২০০৫ সালে ঢাকায় টেম্পুর হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০১০ সালের দিকে তিনি লেগুনা চালাতেন। পরবর্তী সময় ২০১৫ সালে বাসের হেলপার হিসেবে ঢাকায় চাকরি নেন। ২০১৮ সাল থেকে লাব্বাইক ও ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্টে চালক হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাস চালানো শুরু করেন।
২০১৯ সালে হালকা যানবাহন চালনার লাইসেন্স করে নিয়মিত বাস চালানো শুরু করেন। প্রায় এক মাস আগে বর্তমান গাড়ির মালিক খোকার সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়। প্রায় ২০ দিন আগে ওয়েলকাম পরিবহনের ওই বাসটি দৈনিক ২ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে চালানো শুরু করেন জাকির। এর বাইরে গাড়ির লাইন খরচ ১ হাজার ৩০০ টাকা দিতে হতো।
এরপর বাকি টাকা জাকির, হেলপার ও কনট্রাক্টর ভাগ করে নিতেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার দিন কারওয়ান বাজার সিগনাল থেকে যাত্রী নিয়ে পরবর্তী সিগনালে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যকে চাপা দেন জাকির।
বাংলামোটরে গিয়ে বাসটি রেখে পালিয়ে যান তিনি। ঘটনার পর প্রথমে আত্মগোপনে চট্টগ্রাম যান চালক। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। সেখান থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
আর বাসের মালিক খোকা পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন ২০১৭ সালে। একটি বাসের লাভ দিয়ে ২০২০ সালে বাসটি কিনে রুট পারমিট ছাড়াই সড়কে চালানো শুরু করেন তিনি। এখনো গাড়িটির রুট পারমিট না পেলেও দুই বছর ধরে গাড়িটি রাস্তায় চলছিল। ঘটনার পর তিনিও সাভারে আত্মগোপনে যান।