ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটক লাগোয়া পশ্চিম দিকে এটিএম বুথে ইংরেজি হরফেই লেখা ব্যাংকটির নাম। নগর ভবনের মূল ফটক বরাবর সড়কের উল্টো দিকেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও ইংরেজিতে। আইন বলছে, সব সাইনবোর্ড লিখতে হবে বাংলায়। এ আইন প্রয়োগ করতে হবে সিটি করপোরেশনকেই। অথচ করপোরেশনের নাকের ডগাতে হরহামেশাই আইন ভঙ্গ হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়েয়র আশপাশ ছাড়াও রাজধানীর অভিজাত এলাকার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইনবোর্ড বেশি লেখা হয়েছে বিদেশি ভাষায়। অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাটের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা।
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, দপ্তরের নামফলক বাংলায় লেখার নির্দেশ দেন আদালত। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আদালত স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ওই বছরেরই ২৯ মে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মাধ্যমে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে গাড়ির নম্বরপ্লেট ও দপ্তরের নামফলক বাংলায় পরিবর্তিত হয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ইংরেজিতে ছিল, তার বিশেষ বদল হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ সড়ক নির্দেশক সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। এ ছাড়া যত্রতত্র পার্কিং ও হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ—এমন নির্দেশনাও লেখা বিদেশি ভাষায়। হাতে গোনা কয়েকটিতে সাইনবোর্ড শুধু বাংলায়। গুলশান-২ নম্বরের বিভিন্ন সড়কে দেখা, প্রায় সব কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বাণিজ্যিক ভবনের সাইনবোর্ড ও নামফলক লেখা ইংরেজিতে। সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে রাখতে দেখা গেছে। গুলশান-২ নম্বর চত্বরে অবশ্য ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় লেখা কয়েকটি সাইনবোর্ডও দেখা গেছে। গুলশান-২ নম্বর চত্বর থেকে গুলশান-১ নম্বর চত্বর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে থাকা বহুতল ভবনগুলোতে বাংলা ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড ও নামের ফলকের সংখ্যা হাতে গোনা। গুলশান-১ নম্বর সড়ক থেকে হাতিরঝিলমুখী সড়কেরও একই চিত্র।
গুলশান-১ এলাকায় ৩৮ নম্বর সড়কের পাশে ‘দা চকলেট রুম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভেতরে প্রবেশের পর দেখা গেল, বাইরে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড টাঙানোর পাশাপাশি ভেতরেও পণ্যের দাম ও বিভিন্ন নির্দেশনা লেখা আছে ইংরেজিতে। জানতে চাইলে রুহুল আমিন নামের দায়িত্বরত একজন প্রথম আলোকে বলেন, কেন ইংরেজিতে সাইনবোর্ড লেখা হয়েছে, তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড লিখতে হবে হাইকোর্টের এমন নির্দেশনা তিনি জানেন।
এদিকে নয়াপল্টন ও বিজয় নগর এলাকায় এসেও একই চিত্র দেখা গেল। তবে এই এলাকায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষার আধিক্যই চোখে পড়ল।
নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের লাগোয়া পূর্ব দিকের ভবনটিই দ্য ভিক্টরি হোটেল। হোটেলটির বাইরে এবং ভেতরে সবই লেখা ইংরেজিতে। বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড না রাখার কারণ জানতে চাইলে হোটেলের পরিদর্শক মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, এখন যেভাবে তাদের সাইনবোর্ড ঝোলানো আছে, এ বিষয়ে তাঁদের অনুমতি আছে। কোথা থেকে ইংরেজি ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড টাঙানোর অনুমতি নিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা নিশ্চিতকরণে এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পর ডিএনসিসি তিন দিন অভিযান চালিয়ে বিদেশি ভাষায় লেখা বেশ কিছু সাইনবোর্ড অপসারণ করে। তবে উল্টো চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডিএসসিসি এ–সংক্রান্ত কোনো অভিযান চালায়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো পরিচালনা করে সংস্থা দুটির সম্পত্তি বিভাগ। বিদেশি ভাষায় লিখিত সাইনবোর্ড অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড নিয়ে আদালত পরিচালনা করা না হলেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনাকারীদের অসংগতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক দাবি করেন, প্রতিদিনই তাঁরা এসব অপসারণে অভিযান চালাচ্ছেন। বাংলা সাইনবোর্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করপোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা পর্যাপ্ত কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।