বাংলাদেশ বিশ্বনিন্দিত কয়লার ভাগাড় হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বা বিদ্যুতের জন্য কয়লা, এমনকি কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিরই কোনো প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্র পরিচালকদের মন পরিষ্কার থাকলেই আমাদের অফুরন্ত পরিষ্কার বিকল্প জ্বালানি চোখে পড়বে।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আজ শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও শিল্পকারখানা স্থাপন প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করলেই সুন্দরবন, সারা দেশের বনরাজি, নদী, উপকূল, জলাশয়, বাতাস—সবকিছুকেই বাঁচিয়েই উন্নয়নের পথে এগোতে পারি।’
সুন্দরবনে রামপাল প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল প্রকল্পের নির্মাতা ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি তাদের নিজ দেশে সব কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থগিত করেছে। অথচ একই প্রতিষ্ঠান প্রবল গণ-আপত্তির মুখেও বাংলাদেশে কয়লাবিদ্যুৎ তৈরিতে পিছপা হচ্ছে না। এটি নিঃসন্দেহ একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ আচরণ।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুলতানা কামাল। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মো. আবদুল মতিন। তিনি বলেন, সুন্দরবন ধ্বংস হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ধ্বংসের মুখে পড়বে। সেখানে অনেক মানুষের জীবিকা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনকে রক্ষা করার। কিন্তু সরকার তা খুব একটা করছে না।
ব্যাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, এ বছরের ৩০ জুন আজারবাইজানে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায় সুন্দরবনের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনার পর কিছু সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর একটি, যতক্ষণ না পর্যন্ত ‘স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট (এসইএ)’ না আসে, ততক্ষণ সুন্দরবনে কোনো ভারী শিল্প নির্মাণ-প্রক্রিয়ার অনুমতি সরকার দেবে না। এর মানে রামপালসহ যেসব ভারী শিল্পকারখানা নির্মাণ চলমান আছে, সেসব বন্ধ রাখতে হবে। তিনি বলেন, সরকার ইউনেসকোকে বলে এসেছে, এসব সিদ্ধান্ত মানবে। অথচ সরকার মানছে না।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গত ১০ বছরে দেশে প্রায় ৫০টি বড় দুর্যোগ হয়েছে। আইলা থেকেও মানুষকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন। এই সুন্দরবন যদি ধ্বংস হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনে একটা বড় হুমকি হবে। সরকার যদি যথার্থ ভূমিকা না নেয়, তাহলে এই ধ্বংসের দায় তারা এড়াতে পারবে না। তথাকথিত উন্নয়ন-উন্মাদনার নামে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যা চলছে, সেটা একটা ধ্বংসের আয়োজন। এভাবে চলতে থাকলে ওই অঞ্চলের মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা, সুন্দরবনের বাফার জোন, কোর জোন ও বনের নিকটবর্তী সব কলকারখানা, এলপিজি কারখানা বন্ধ করা, ইউনেসকোর সব দিকনির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা, লাল ক্যাটাগরির শিল্পকে সবুজ করার কাজ বন্ধ করা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষার কার্যসীমা নির্ধারণ করা।