ভাড়াভিত্তিক গৃহায়ণের আবাসন

বস্তিবাসীর আগ্রহও কম, নির্মাণকাজও শেষ হয়নি

বস্তিবাসী এসব ফ্ল্যাটের ভাড়া বেশি বলে মনে করছেন। ঠিকাদারকে বিল দিতে দেরি করায় কাজে ঢিলেমি।

বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের বাউনিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায়
 ছবি: প্রথম আলো

নদীতে বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধের এলাকায় গড়ে ওঠা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শাকিলা বেগম। ২২ বছর ধরে তিনি স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানেই সরকারি জমিতে থাকছেন। এদিকে বস্তিবাসীর উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে একই এলাকায় সরকার পাঁচটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। কিন্তু শাকিলাকে ওই ভবনের ফ্ল্যাটে উঠতে পাঁচ মাস আগে ভাড়ার বরাদ্দপত্র দেওয়া হলেও এখন তিনি ওঠার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কারণ হিসেবে শাকিলা বলছেন, এখন তিনি সরকারের যে জমিতে ঘর তৈরি করে থাকছেন, সেখানে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বস্তিবাসীকে দেওয়া এসব ফ্ল্যাটে থাকতে হলে প্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হবে। টাকা দিয়ে যদি ফ্ল্যাটে থাকতেই হয়, তাহলে ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা চান তিনি। এ জন্য কিস্তিতে ফ্ল্যাটের টাকা পরিশোধে তাঁর আপত্তি নেই।

শাকিলার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে শাকিলাসহ মোট ৩০০ বস্তিবাসীকে গত ৩ আগস্ট ফ্ল্যাটের ভাড়াপত্র দিয়েছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত পাঁচ মাসেও বস্তিবাসীর কেউ সরকারের ওই ফ্ল্যাটে উঠতে গৃহায়ণের সঙ্গে ভাড়ার চুক্তি করেননি। অন্যদিকে গৃহায়ণও এসব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করেনি।

বস্তিবাসীর জন্য রাজধানীর মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধের বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৪ তলা পাঁচটি ভবন নির্মাণ করছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিনটি ভবনে বসবাসের জন্য গত আগস্ট মাসে ৩০০ জনকে ভাড়ার বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়। সেখানে নির্মিত পাঁচটি ভবনে মোট ৫৩৩টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা আছে। ৫১০ বর্গফুটের (কমন স্পেসসহ ৬৭৩ বর্গফুট) একেকটি ফ্ল্যাটে শোবার ঘর রয়েছে দুটি। এ ছাড়া সেখানে বসার ও খাবার ঘর, বারান্দা, শৌচাগার এবং স্নানাগারও রয়েছে।

ইব্রাহিম নামের এক বস্তিবাসী প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়া তো বেশি। আবার ভবনের কাজই তো শেষ হয়নি। উঠবেন কি না এখনো ঠিক করেননি।

বস্তিবাসী বলছেন, মূল ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা হলেও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, সার্ভিস চার্জসহ সব মিলিয়ে আট থেকে নয় হাজার টাকা পড়বে। তবে গৃহায়ণ বলছে, বড়জোর একটি পরিবারের মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা খরচ হতে পারে। ভাড়া আরও কমাতে হলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন লাগবে।

বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১। এ ডিভিশন সূত্র বলছে, পাঁচটি ভবন নির্মাণে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। সব টাকার জোগান দিচ্ছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এখন পর্যন্ত কেউ ফ্ল্যাটে উঠতে ভাড়ার চুক্তি না করার কারণ জানতে চাইলে গৃহায়ণের ঢাকা ডিভিশন-১–এর কর্মকর্তারা বলেন, চলতি মাসেই তারা ওই এলাকায় ভাড়া চুক্তি সম্পাদনের জন্য মাইকিং করবেন, প্রচারপত্র বিতরণ করবেন।

অবশ্য গৃহায়ণের একটি সূত্র বলছে, ভবন নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে গত বছরের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করা হয়। তখন কেবল একটি ফ্ল্যাট পুরোপুরি তৈরি করা হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহায়ণের দুই কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারকে বিল দিতে দেরি হওয়ায় গত কয়েক মাসে কাজের গতি মন্থর ছিল।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত ৫০ জন শ্রমিক পাঁচটি ভবনেরই বাকি কাজ করছেন। কেউ জানালার গ্রিল তৈরি করছেন। কেউ খননযন্ত্র দিয়ে মাটি সরাচ্ছেন। প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। সেখানে নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখা।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকা অঞ্চল-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তথা আগামী ১৭ মার্চ বরাদ্দ দেওয়া ৩০০ বস্তিবাসীকে ভবনে ওঠানোর পরিকল্পনা করেছেন। বাকি দুটি ভবনে আরও ২৩৩ জনকে পরের দুই মাসের মধ্যেই ওঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাঁরা ভাড়ার বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁরা যদি ভাড়া চুক্তি করতে অনাগ্রহ দেখান, তাহলে নতুন বস্তিবাসীকে সেখানে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে।