আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, কোনো নির্বাচন ছাড়া জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় বসে থাকা বর্তমান সরকারের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তার আবার আইন করার অধিকার কী করে হয়! ফলে পুরো ব্যাপারটাই বেআইনি।
বেআইন ও আইন মিলিয়ে সরকার একটা জুলুমের শাসন চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা, লুটপাট ও সম্পদ পাচারের জন্য জুলুমের শাসন দরকার।
আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার’ এক সংহতি সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। ‘সন্ত্রাসবিরোধী রাজু দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা চার দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করেন। দাবিগুলো হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সব ‘রাজবন্দীর’ মুক্তি, ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং লেখক মুশতাক আহমেদ ‘হত্যার’ বিচার।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ‘সবচেয়ে বড় সংবিধান ভঙ্গকারী’ আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মানুষকে ভয় ধরানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভয় দেখিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে সারা দেশে একটা স্তব্ধতা তৈরি করে, স্থিতিশীলতার নামে কবরের নিস্তব্ধতা তৈরি করে তারা যা খুশি তা-ই করতে চায়। মানুষ কথা বলতে পারলে পাচারটা কীভাবে সম্ভব? মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলে নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকা কীভাবে সম্ভব? সে জন্যই এ ধরনের আইন দরকার হয়।...আমরা যদি বলি যে বর্তমান সরকারই হচ্ছে প্রধান আইনভঙ্গকারী, সবচেয়ে বড় আইনভঙ্গকারী, সবচেয়ে বড় সংবিধান ভঙ্গকারী, তাহলে কোনো অত্যুক্তি হবে না।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, মতের ভিন্নতা থাকলে মত দিয়েই তাকে মোকাবিলা করতে হবে। কথার বিপরীতে কথা, লেখার উত্তরে লেখা, মতের বিপরীতে মত—এটাই যেকোনো সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য। সরকার যেহেতু খুবই শক্তিশালী এবং দাবি করে যে তারা খুব জনপ্রিয়, তাহলে কেউ সমালোচনা করলে, ভিন্নমত পোষণ করলে কিংবা অন্যায়ের সমালোচনা করলে, আর তা ভুল মনে করলে তাদের অসংখ্য লোক থাকার কথা, যাঁরা তার প্রতিবাদে লিখবেন ও কথা বলবেন। সেই লেখা ও কথার মধ্য দিয়েই সমাজের সবাই বুঝতে পারবেন যে কোনটি সঠিক আর কোনটি বেঠিক। কিন্তু সরকার এই পথে যেতে চায় না। কেন কেউ একটা কথা বললে সরকারের বলপ্রয়োগকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সন্ত্রাসী বাহিনী তৎপর হয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করে? ফেসবুকে লেখা ও কার্টুন প্রকাশের জন্য কেন জেলে যেতে হয়, জখম হতে হয়, জামিন না পেয়ে জেলখানায় মারা যেতে হয়?
ছাত্র ইউনিয়ন নেতা তাসিন মল্লিকের সভাপতিত্বে ও মেঘমল্লার বসুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদসহ ছাত্রনেতা ও শ্রমিকনেতারা বক্তব্য দেন। আলোচনা পর্ব শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশেই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।