ফেরিতে দুজনকে বেদম পিটুনিসংক্রান্ত সংবাদের বিষয়ে ডিএসসিসির বক্তব্য

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

‘মেয়র তাপসের বহরের সঙ্গে ফেরিতে ওঠায় দুজনকে বেদম পিটুনি’ শীর্ষক সংবাদের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের সংবাদ ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং করপোরেশনের ‘ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করার নামান্তর’।

আজ সোমবার ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস করপোরেশনের সব কাউন্সিলর ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৩ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে নির্ধারিত সময় (সন্ধ্যা ৬.৪৫টা) ফিরে এলেও মেয়র মহোদয়ের বহরের জন্য নির্ধারিত ফেরি সেখানে ছিল না।

তখন ফেরি সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পুরো বহরকে ‘শাহ আমানতপুরী’ নামক ফেরিতে উঠিয়ে দেন। ইতিমধ্যে সেই ফেরিতে বহরের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি উঠে পড়ে। এতে বহরে থাকা তিনটি বাসের জন্য ফেরিতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ফেরি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সেসব ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে নেমে যেতে অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্য সব যানবাহন নেমে গেলেও দুটি গাড়ি নামতে গড়িমসি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরই মধ্যে মেয়র মহোদয়ের বহরের জন্য নির্ধারিত ‘ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা’ নামক ফেরিটি ফেরিঘাটে আনা হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও সেই দুটি গাড়ি নেমে যেতে সম্মত না হওয়ায় মেয়র মহোদয় প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর ওই ফেরি (শাহ আমানতপুরী) থেকে নেমে আসেন এবং সকল গাড়িকে বহরের জন্য নির্ধারিত ‘ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা’ ফেরিতে তোলার সিদ্ধান্ত দেন। সে সময় ‘শাহ আমানতপুরী’ ফেরি থেকে বহরের গাড়িগুলোকে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বর্ণিত দুই ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি না সরানোয় গাড়ি স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হয়। অধিকন্তু সেই দুই ব্যক্তি কখনো এনএসআই কর্মকর্তা, কখনো পুলিশ সুপারের আত্মীয়, কখনো স্থানীয় যুবলীগ নেতা ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে সেখানে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে ধমকাতে থাকেন। তাঁদের উসকানিমূলক কথাবার্তায় সেখানে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর লোকজনও সে সময় বিরক্তি প্রকাশ করেন। অবশেষে সেই দুই ব্যক্তির গাড়ি পাশ কাটিয়ে পুরো বহরের গাড়িগুলোকে ‘ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা’ নামক ফেরিতে স্থানান্তর করা হয়।

বহরের সব গাড়ি ‘ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা’ ফেরিতে স্থানান্তরিত হলে রাত ৭.৫৫ টার দিকে মেয়র সব কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ফেরিতে অবস্থান করেন। ফেরিতে অবস্থানকালীন রাত ৮টা নাগাদ হঠাৎ ফেরির বাইরে শোরগোলের শব্দ শোনা গেলে ডিএসসিসির কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কাউন্সিলর শোরগোলের কারণ জানার চেষ্টা করেন। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, কথিত সেই ব্যক্তিদ্বয়ের অনড় মনোভাবের জন্য ফেরি পরিবর্তনজনিত কারণে বহর ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ির লোকজনেরও সময়ক্ষেপণ হওয়ায় তাঁরা সেই দুই ব্যক্তির ওপর সংক্ষুব্ধ হন। আরও জানা যায়, সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ব্যক্তিগত সেসব গাড়ির চালকেরা সেই দুই ব্যক্তিকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছেন এবং অবস্থা বুঝতে পেরে পরে সেই দুই ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কথিত সেই দুই ব্যক্তিকে জখম কিংবা মারধরে ডিএসসিসি মেয়রের প্রটোকলে থাকা কোনো ব্যক্তি কিংবা ডিএসসিসির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই জড়িত নয়। তাই এ ধরনের সংবাদে মেয়রের বহরকে জড়িয়ে দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন হয়নি। অধিকন্তু সেই ব্যক্তিদ্বয়ের অসহযোগিতামূলক আচরণের জন্য মেয়রসহ পুরো বহরকে ফেরি পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং এতে দেড় ঘণ্টার অধিক সময় ফেরিতে অবস্থান করতে হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুজন ভুক্তভোগী ব্যক্তির বরাতে পরিবেশিত সংবাদের শেষ কয়েক লাইনে বলা হয়েছে, ‘গতকাল বিকেলে মেয়র তাপসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।’ বর্ণিত বিষয়টি পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। কারণ, ডিএসসিসির মেয়র কিংবা বর্ণিত কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট দৈনিক পত্রিকাটির মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি পরিচয়ে কেউ ফোন দেননি। সুতরাং এ–সংক্রান্ত বিষয়ে উক্ত জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথাও হয়নি। তাই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিবর্গ জড়িত নয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি আরও বলছে, ডিএসসিসি গঠনমূলক সমালোচনা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনকে সাধুবাদ জানায় এবং বস্তুনিষ্ঠ সেসব সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় অধিকাংশ সময়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কারণ, ডিএসসিসি বিশ্বাস করে, এই নগরীকে সত্যিকার অর্থে একটি উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা এবং সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ নয় এমন সংবাদ পরিবেশন কাম্য হতে পারে না।