গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২–এ উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন দোকানিরা। এ জন্য পূর্বনির্ধারিত উচ্ছেদ অভিযান এখনো শুরু করতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলছিল।
ডিএসসিসির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর এই বিপণিবিতানে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান আছে। যার মধ্যে কিছু দোকান বিপণিবিতানের শৌচাগার, লিফটের জায়গা ও মানুষের হাঁটার পথে তৈরি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এই দোকানগুলো উচ্ছেদে অভিযান শুরুর কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ঘটনাস্থলে এসেছেন। কিন্তু তার আগেই বিপণিবিতানের সামনের সড়কে অবস্থান নেন সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় বা নগর ভবনের ঠিক উল্টোপাশে এই বিপণিবিতানটির অবস্থান। এতে তিনটি ভবন রয়েছে। এগুলো এ, বি ও সি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। তবে দোকানিরা এ ব্লকের নাম দিয়েছেন সিটি প্লাজা, বি ব্লকের নগর প্লাজা এবং সি ব্লকের নাম দিয়েছে জাকের সুপার মার্কেট।
অভিযান ঠেকাতে বিপণিবিতানের সামনে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন এক হাজারের বেশি দোকানি ও কর্মচারী। তাঁরা সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। জীবন দেবেন, কিন্তু রাস্তা ছাড়বেন না বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় বিপণিবিতান সমিতির লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু দোকানিদের অবস্থান চলছে।
দোকানিদের দাবি, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় নকশাবহির্ভূত এসব দোকান বৈধ করতে তাঁরা লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন। দোকানগুলো থেকে ডিএসসিসি এত দিন ভাড়াও নিয়েছে। এখন কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই দোকান উচ্ছেদ করার জন্য এসেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
তবে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রথম আলোকে বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের আগে দোকানমালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ জানায়, বিপণিবিতানটির নকশা অনুয়ায়ী এ ব্লকে ১৭৬টি দোকান, বি ব্লকে ১৭৬টি, সি ব্লকে ১৭৯ টিসহ মোট ৫৩১টি দোকান থাকার কথা। কিন্তু নকশাবহির্ভূতভাবে এ ব্লকে ৩০৮টি, বি ব্লকে ২৯২টি এবং সি ব্লকে ৩১১টি দোকান করা হয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিপণিবিতানের নকশাবহির্ভূত দোকান এবং এর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে একটি কমিটি গঠন করে দেন। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি বিপণিবিতানে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে এবং সেগুলো উচ্ছেদের সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশে মেয়র সম্মতি দিয়ে নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদের নির্দেশনা দেন। এরপর আজ বেলা ১১টা থেকে পর্যায়ক্রমে নকশাবহির্ভূত সব দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিএসসিসি।
এদিকে দোকানের উচ্ছেদ অভিযান শুরু না হলেও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিপণিবিতানটির পাশেই আছেন। ঘটনাস্থল থেকে উচ্ছেদের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছেন, আরও পুলিশ সদস্য আনার জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন।