ফুটপাতে শ্রমিক লীগের কার্যালয়

সায়েদাবাদে ধলপুর নতুন সড়কের ফুটপাতে কার্যালয় করেছে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগ। প্রথম আলো
সায়েদাবাদে ধলপুর নতুন সড়কের ফুটপাতে কার্যালয় করেছে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগ।  প্রথম আলো

সায়েদাবাদে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনের ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের পৃথক দুটি কার্যালয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দুটি কার্যালয় থেকে ধলপুর বাজারে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কার্যালয়টি অপসারণেরও কোনো উদ্যোগ নেই। 

ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ সূত্র জানায়, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনের এই জায়গাটি আগে ফাঁকা ছিল। ২০১০ সালের দিকে এই ফাঁকা জায়গা দখল করে কমিউনিটি সেন্টারের দেয়াল ঘেঁষে কার্যালয় তৈরি করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের দেখাদেখি তখন পাশেই আওয়ামী লীগের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয় গড়ে ওঠে। এ ছাড়া ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার ও বাজার ঘিরে শতাধিক অবৈধ দোকানপাট বসান তাঁরা। পরে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে এই দুটি কার্যালয়সহ ফুটপাতে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ধলপুর নতুন রাস্তার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, এই দুটি কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাসখানেক পর নতুন করে একই জায়গায় আবার স্থাপনা তৈরি করে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগ। অথচ মাত্র ২০০ মিটার দূরেই রয়েছে ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক কার্যালয়। তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি টিনশেডের স্থাপনায় পৃথকভাবে রয়েছে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের কার্যালয়। দুটি কার্যালয়ের ভেতর দলীয় লোকজনের ভিড়। তাঁরা ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুন লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যে শ্রমিক লীগের কার্যালয়ে এক পাশে সংগঠনটির কয়েকজন নেতা–কর্মীকে তাস খেলতে দেখা যায়। কৃষক লীগের কার্যালয়ের একাংশে রয়েছে একটি ফলের রসের দোকান। ফাহানা নামে এক নারী এই দোকানটি পরিচালনা করছেন। এই দুটি কার্যালয়ের উত্তর পাশেই ধলপুর বাজার। সেখানে ফুটপাতের ওপর প্রায় ৪০টি অবৈধ দোকান দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধলপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ধলপুর বাজারের এই দোকানগুলো অবৈধ। প্রতি দোকান থেকে দিনে গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা–কর্মীরা। মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস বা দলীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তাঁরা ধলপুর বাজারের বৈধ দোকানপাটে হানা দেন। প্রতিটি দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা নেন। এই টাকা দিয়ে তাঁরা ক্লাবে (কার্যালয়) আনন্দ-ফুর্তি করেন।

 চাঁদাবাজির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষক লীগের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই তাঁরা এই দুটি কার্যালয় তৈরি করেছেন। আর সংগঠন পরিচালনার খরচ মেটাতেই তাঁরা এই ফলের রসের দোকান দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত বা সড়কের ওপর অবৈধ স্থাপনা অপসারণে তাঁরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন। এখানে ফুটপাতের ওপর স্থাপনা নির্মাণে কাউকে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই দুটি কার্যালয় অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।