কোনো আগাম পরিকল্পনা ছিল না। ঘরবন্দী থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে লাবণী আর প্রমা দুই বোন কাল বাইরে বের হয়েছিলেন। রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে লালবাগ কেল্লার সামনে এসে তো অবাক। কেল্লা খুলে গেছে! কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করে টিকিট কেটে ফটক পেরিয়ে ভেতরে আসতেই তাঁদের চোখ জুড়িয়ে যায় ভেতরের দৃশ্যে। মাথার ওপরে খোলা আকাশ। নিচে গালিচার মতো সবুজ ঘাস বিছানো বিশাল মাঠ। তার মাঝ দিয়ে লাল ইট বিছানো পথ। দুই পাশে সারি দিয়ে লাগানো গাছগুলো পরিপাটি করে ছাঁটা। কোনো কোনোটির শাখা ভরে আছে মৌসুমি ফুলে ফুলে। চারপাশের ঘিঞ্জি দালানকোঠার মধ্যে যেন একটুকরা সবুজ স্বর্গ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৯ মার্চ থেকে দেশের প্রত্নজাদুঘর ও প্রত্নস্থানগুলো দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। টানা ১৮০ দিন বন্ধ থাকার পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে গতকাল বুধবার থেকে এগুলো আবার খুলেছে। প্রথম দিন দর্শনার্থী কম থাকলেও ফিরেছে প্রাণস্পন্দন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে টিকিট দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, এমন প্রত্নজাদুঘর ২১টি ও প্রত্নস্থল ২০টি, মোট স্থাপনা ৪১টি। এসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হবে। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্র মাপা এবং হাত স্যানিটাইজ করা হবে। নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁরা সৌজন্যের সঙ্গে দর্শনার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও মাস্ক ব্যবহার করতে বলবেন।
রাজধানীতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রত্নস্থান লালবাগ কেল্লায় গতকাল দর্শনার্থী খুব বেশি ছিল না। খোলার কথা লোকজন জানতেন না। লাবণী ও প্রমা জানালেন তাঁদের বাড়ি আজিমপুরে। তাঁরা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। কেল্লার ভেতরের দৃশ্যে তাঁরা মুগ্ধ। এত দিন বন্ধ থাকার পরও সবকিছু পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। এটা তাঁদের খুব ভালো লেগেছে।
লালবাগ কেল্লার কাস্টডিয়ান হালিমা আফরোজ জানালেন, দর্শনার্থীদের জন্য কেল্লা বন্ধ থাকলেও মাঠের ঘাসকাটা, বাগানের পরিচর্যা করাসহ সব কাজই নিয়মিত করা হয়েছে। সাধারণত কেল্লায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার দর্শনার্থী হয়, আর শুক্রবার তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কাল ৭১২ জন দর্শনার্থী এসেছেন। এখানে সন্ধ্যায় ২৯ মিনিটের একটি ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ হয়। কেল্লার বন্ধ দ্বার যখন খুলেই গেছে, এখানে বেড়াতে এলে ঘরবন্দী মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।
দর্শনার্থীদের জন্য কেল্লা বন্ধ থাকলেও মাঠের ঘাসকাটা, বাগানের পরিচর্যা করাসহ সব কাজই নিয়মিত করা হয়েছে। সাধারণত কেল্লায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার দর্শনার্থী হয়, আর শুক্রবার তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কাল ৭১২ জন দর্শনার্থী এসেছেন। এখানে সন্ধ্যায় ২৯ মিনিটের একটি ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ হয়। কেল্লার বন্ধ দ্বার যখন খুলেই গেছে, এখানে বেড়াতে এলে ঘরবন্দী মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।হালিমা আফরোজ, লালবাগ কেল্লার কাস্টডিয়ান
কুমিল্লা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুমিল্লার কোটবাড়ীতে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বৌদ্ধবিহার, ময়নামতি জাদুঘর, রূপবান মুড়া ও ইটাখোলা মুড়া পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। খোলার দিন শরতের এই বৃষ্টি এই রোদ আবহাওয়ার মধ্যে অন্তত ৪২৩ জন পর্যটক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখেন। এর ফলে পর্যটন এলাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বগুড়ার মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এলাকা, প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, গোকুল মেধ গোবিন্দভিটা প্রত্নস্থলের ফটক খুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার প্রাচীন রাজধানী এই পুণ্ড্রনগর এলাকা। মহাস্থানগড় জাদুঘরের কাস্টডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, প্রথম দিনে ৫৫০ জন দর্শনার্থী এসেছিলেন।
খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর খুলে দেওয়া হয়। তবে প্রচার না থাকায় দর্শনার্থী ছিল খুব কম। দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুজন এসেছেন।