শুরুটা বেশ আকস্মিকভাবেই হয়েছিল। নতুন করোনাভাইরাস ও দেশে স্বাস্থ্য সরঞ্জামের সংকটের খবরটি শুনে উদ্বিগ্ন ছিলেন সবাই। প্রবাসী কয়েকজনের মাথায় খেলে যায় চমৎকার এক আইডিয়া। চীন থেকে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনে দেশে চিকিৎসাকর্মীদের কাছে বিনা মূল্যে বিতরণ করলে কেমন হয়?
যেই ভাবা সেই কাজ, দ্রুত তাঁরা যোগাযোগ করেন অন্য বন্ধুদের সঙ্গে। মিঠুন, রোকন, মোনেম, তায়েফ, আনন্দ, শাকির, মুশফিক, আবরার, তাহফীম, ইমন, লিমু, তৌহিদ, আজহার—এঁদের কেউ দেশে, কেউ বিদেশে নানাবিধ পেশায় জড়িত। সবাই মিলে ঠিক করা হলো, বন্ধুদের নিজস্ব অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি প্রবাসী ও দেশের অন্যান্য মানুষের কাছেও সাহায্য চাওয়া প্রয়োজন। ফেসবুক ও উইচ্যাটের মাধ্যমে কাজ শুরু করলেন তাঁরা। জন্ম নিল ফেসবুক গ্রুপ ‘Humans for Bangladesh: Fight against Covid-19’।
উদ্যোক্তাদের একজন আরাফাত ইমন। তিনি চীনের একটি প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। আরাফাত প্রথম আলোকে জানান, শুরু থেকেই কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিলেন তাঁরা। অর্থ সাহায্যের পুরো ব্যাপারটি উন্মুক্ত রেখেছেন গুগল শিটের মাধ্যমে। তিনটি মহাদেশ থেকে দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে গেছেন অর্থ সংগ্রহ আর প্রচারণায়। এক সপ্তাহের মধ্যেই উঠে আসে ১৩ লাখ টাকার বেশি। এই টাকা দিয়েই কেনা হয় সব সরঞ্জাম। ইউএস বাংলা গ্রুপের কার্গোর মাধ্যমে সেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম দেশে আনার সব ব্যবস্থা করা হয়। কার্গো প্রতিষ্ঠান সব চার্জ ফ্রি করে দেয়। দেশে পৌঁছে যায় ৩৫০ সেট পিপিই, ১৩৫০ পিস মাস্ক, ৪০০০ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক, ১০০ পিস গগলস ও ৮০ পিস ফেস শিল্ড।
আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম ঠিকভাবে বিলি-বণ্টনের জন্য দেশের চিকিৎসকদের একটি গোষ্ঠী প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল সোসাইটি কাজ করবে। সরঞ্জাম হস্তান্তর ও বণ্টন পরিকল্পনার দায়িত্বে Humans for Bangladesh: Fight against Covid-19 নামের ফেসবুক গ্রুপের দুজন চিকিৎসকও রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুসারে র্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশনের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে করোনা ওয়ার্ড, আইসিইউ, ইনডোর মেডিসিন ওয়ার্ড, রেসপিরেটরি মেডিসিন ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড, নেফ্রোলজি ওয়ার্ড ও ইএনটি ওয়ার্ডে পিপিই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে এই সরঞ্জামগুলো বিতরণ করা হয়েছে।
আরাফাত ইমনের আশা, এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা যেমন সুচিকিৎসা পাবে, সেই সঙ্গে যাদের করোনা রোগী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, কিন্তু পিপিইর অভাবে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তারাও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে না।