সকালেই সহকর্মীর মৃত্যু হয়। মো. রাসেলকে তা জানানো হয়নি। কিন্তু একই কক্ষ থেকে একজনকে বের করে নেওয়ার বিষয়টি তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন বলে ধারণা স্বজনদের। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনার শিকার বেঙ্গল মিটের কর্মী মো. রাসেল (২১) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
ঠাকুরগাঁওয়ের একটি সরকারি কলেজে রাসেল স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর চাচা মো. বজলুর রহমান হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, রাসেলের বাবা কৃষক। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। কলেজ বন্ধ থাকায় তিনি বসে না থেকে নিজে উপার্জনের আশায় ছয় মাস আগে ঢাকায় আসেন। বিস্ফোরণের পাঁচ দিন আগে বেঙ্গল মিটে চাকরি নেন। একটু ভালো থাকার আশা এখন নিবু নিবু।
গত রোববার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত নয়জন নিহত হয়েছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনো দুজন আইসিইউতে এবং দুজন সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ বুধবার সকাল পৌনে সাতটায় বেঙ্গল মিটের কর্মী ইমরান হোসেন (২৫) মারা যান। তাঁর শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়। এখন আইসিইউতে থাকা রাসেল এবং ভ্যানচালক নূর নবীর শরীরের ৯০ শতাংশও দগ্ধ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ইমরানের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। তাঁর স্ত্রীর কান্না থামাতে পারছে না কেউ। ইমরানের মৃত্যুতে আইসিইউতে থাকা অন্যদের স্বজনদের মনে ভয় ও আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
রাসেলের চাচা মো. বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাসেলের জ্ঞান আছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। রাসেল তাঁদের জানিয়েছেন, সেকেন্ডের মধ্যে আগুনের গোলা দেখেন এবং পরে আর কিছু তাঁর মনে নেই।
আর ভ্যানচালক নূর নবী (৩০) মনেই করতে পারছেন না কী হয়েছে এবং তিনি হাসপাতালে কেন। তাঁর স্ত্রী পপি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন। নূর নবী বলেছেন, ভ্যান চালিয়ে তিনি বাসায় গিয়ে ঘুমিয়েছেন। ঘুম থেকে ওঠে তিনি হাসপাতালে কী করছেন, তা জানতে চান।
রাজবাড়ী থেকে নূর নবীর ভাই সবুজ মিয়া এসেছেন। সকালে একজনের মারা যাওয়ার খবরে তাঁদের মনে ভয় ধরেছে। কারণ, তাঁদের রোগীরও একই অবস্থা। সবুজ বলেন, করোনার কারণে অনেক দিন গ্রামেই ছিলেন নূর নবী। মাসখানেক আগে ঢাকায় আসেন। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, সেখান থেকে তিন শ টাকা প্রতিদিন মালিককে দিতে হয়। গ্রামের পরিবার এবং নিজের চলার জন্য সামান্য আয় দিয়ে হিমশিম খেতে হয়। ভাইয়ের বা পরিবারের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে চিন্তায় অস্থির তাঁরা।