রাজধানীতে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে কয়েক দিন ধরে। বিশেষ করে গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার সেন্টারগুলোয় জ্বলেনি লাল-নীল বাতি। বর-কনের আসনটি ফাঁকা। জন্মদিন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানেরও হৈ হুল্লোড় নেই। কমিউনিটি সেন্টারের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা টেলিফোনে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন বর-কনের পক্ষ বা অন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের। সেন্টারের কর্মীরা অলস সময় পার করছেন।
শুক্র ও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
১৯ মার্চ করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিকেলে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে এ নির্দেশের কথা জানানো হয়। কমিউনিটি সেন্টারগুলোর জন্য আলাদা কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানালেন সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।
শনিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরে উত্তর সিটি করপোরেশন পরিচালিত সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, রোদের মধ্যে বড় বড় হাঁড়ি–পাতিল খালি পড়ে আছে। শনিবার দুপুরে যে শ্রমিকদের দম ফেলার ফুসরত থাকার কথা নয়, ওই শ্রমিকেরা অলস বসে আছেন।
সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের ডেকোরেশন ব্যবস্থাপক আবদুল ওয়াহিদ জানালেন, বৃহস্পতিবার থেকে সেন্টারের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যাঁদের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে আবার অনুষ্ঠান করবেন বলে টাকা ফেরত নিচ্ছেন না। তবে এ পর্যন্ত স্ব-ইচ্ছায় কেউ অনুষ্ঠান বাতিল করতে চাননি।
আবদুল ওয়াহিদ জানালেন, বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত ছয়টি বিয়ে বাতিল করা হয়েছে। এই সেন্টারে দুপুরে অনুষ্ঠান হলে ৪১ হাজার ৫০০ টাকা এবং রাতের অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া হতো ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ ছয়টি অনুষ্ঠান বাতিলেই ক্ষতি হয়ে গেছে কয়েক লাখ টাকা। তবে এ ক্ষতি হলেও নিজেদের স্বার্থেই অনুষ্ঠান বাতিল করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরেরই আরেকটি বেসরকারি ভাবে পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার নিউ প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারেও একই অবস্থা দেখা যায়। সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম বললেন,‘ সরকার গণজমায়েতসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কাস্টমারও আসে না। তাই গত কয়েক দিন ধরেই সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ আছে। সেন্টারের লাল-নীল বাতিও জ্বলে না।’
এই সেন্টারটিতে দুপুরে অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া ৬০ হাজার টাকা আর রাতে অনুষ্ঠানের ভাড়া ৬৫ হাজার টাকা। নুরুল ইসলাম বললেন,‘রমজানের আগে বিয়ের অনুষ্ঠান বেশি হয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কর্মীদের বেতন দেওয়াই সমস্যা হয়ে যাবে। তবে নিজেরা বাঁচতে চাইলে এর বিকল্পও নেই।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য বলছে, সমাজকল্যাণ শাখার অধীনে মোট ১৩টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে ৫টি সেন্টার মেরামত ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বর্তমানে ৮টি কমিউনিটি সেন্টার থেকে নাগরিকেরা সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ পাচ্ছেন। মিরপুর ১ নম্বরে শহীদ কমিশনার ছায়েদুর রহমান নিউটন কমিউনিটি সেন্টারের সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা (অঞ্চল ৪) মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা টেলিফোনে কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকার কথা জানালেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ৩৬টি কমিউনিটি সেন্টারের পাশাপাশি নর্থ বুক হল, কাজী বসির মিলনায়তন এবং জহির রায়হান কালচারাল সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে এ সিটি করপোরেশনের অধীনে। সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারসহ আরও কয়েকটি সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আফজালুল আজমও টেলিফোনে বললেন, ‘করোনার আতঙ্কে আমরা নিজেরাও আতঙ্কিত। সরকারের নির্দেশনা ছাড়াও আমরা নিজেরাও ভাড়া দিতে আগ্রহী নই। প্রায় আট থেকে ১০ দিন ধরেই কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অনুষ্ঠান বন্ধ আছে।’