নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন তুলে নিতে হবে

ভূমি-কৃষি–সম্পত্তিতে নারী–পুরুষে সমঅধিকারের দাবিতে নারীদের কয়েকটি সংগঠন মিলে সংসদ ভবনের বিপরীতে মানববন্ধন করে
ছবি: সাজিদ হোসেন

সারা দিন খেটে একজন চা–শ্রমিক পান ১২০ টাকা মজুরি। তারপর যদি তিনি নারী হন, তাহলে প্রয়োজনীয় কোনো দাবি–দাওয়া বা সিদ্ধান্ত গ্রহণও করতে পারেন না। চা–শ্রমিক খায়রুন আক্তারের প্রশ্ন, ‘এই ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে এই বাজারে কী পাওয়া যায়? কোনো সিদ্ধান্তও আমরা নিতে পারি না। চা–বাগানে নারী শ্রমিকেরা যদি কাজ বন্ধ রাখেন, তাহলে চা উৎপাদিত হবে না।’

আজ বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নারী দিবস উপলক্ষে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বেলা, একশনএইড, ব্লাস্ট, বিএনপিএস,  নাগরিক উদ্যোগ, আইপিডিএস, কাপেং ফাউন্ডেশন এবং আরবান, স্ট্যান্ড ফর হার–বাংলাদেশ কোয়ালিশনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কৃষক ভবানী রানী কৃষিজমিতে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বৈষম্যের কথা বলেন। জনপ্রতিনিধিরাও তাঁর কথা শুনতে চান না বলে অভিযোগ করেন। আরও কয়েকজন কৃষক জানান, পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে মাঠে কাজ করলেও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই। অনেকে কাজে নিতে চান না।

সার, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হন বলে জানান।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ করে প্রান্তিক নারীরা আরও বেশি বঞ্চিত। এত দিনেও রাষ্ট্র নারীবান্ধব সমাজ তৈরি করতে পারেনি। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার নারী হলেই সমাজ নারীবান্ধব হয়ে যায় না। তিনি সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, সম্পত্তি, ভূমি, খাসজমি, কৃষিতে নারী এখনো বৈষম্যের শিকার। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন তুলে নিতে হবে।

নারীরা ঐতিহাসিকভাবে শোষণের শিকার উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশেও নারীরা যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে থাকতে হবে। সেটা প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রও সম্মানিত হবে।

এলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক রওশান জাহান মনি বলেন, এখানে সব সংগঠন যেসব দাবি নিয়ে এসেছে, তার সবই ন্যায়সঙ্গত। তিনি ভূমিসহ সব ধরনের সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের পাশাপাশি সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলেন।

মানববন্ধনে বলা হয়, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ গ্রামীণ নারী কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু জমিতে নারীর কোনো মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রান্তিক নারীরা সম্পত্তিও অর্জন করতে পারেন না। খাসজমি পেতেও আইনিভাবে নারী বৈষম্যের শিকার। সংগঠনগুলো বলছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার থেকে নারী বঞ্চিত। এটা মানবাধিকার ও সংবিধানের লঙ্ঘন। নারী–পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন।