নবজাতকটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, ঘটনা তদন্তে কমিটি

নবজাতক
প্রতীকী ছবি

মৃত ঘোষণার পর দাফনের আগমুহূর্তে নবজাতকের নড়েচড়ে ওঠার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেছেন, শিশুটি অপরিণত হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে।

আজ শুক্রবার ভোরে এই কন্যা নবজাতকের জন্ম হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জন্মের পরপরই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় মৃত্যুর সনদ। বাবা ইয়াসিন নবজাতককে নিয়ে যান আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে দাফনের খরচ পোষাতে না পেরে মরদেহ নিয়ে যান রায়েরবাজার কবরস্থানে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছিল তখন। এমন সময় নবজাতকটি নড়েচড়ে ওঠে, শুরু করে কান্নাকাটি। এরপর তাকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসেন ইয়াসিন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতকটির কোনো হৃৎস্পন্দন পাওয়া যায়নি। অপরিণত হওয়ায় প্রায় এক ঘণ্টা নবজাতকটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এরপর আরও কয়েক ঘণ্টা নবজাতকটিকে হাসপাতালে রাখা ছিল। কিন্তু এ সময়ে তার মধ্যে প্রাণের কোনো সাড়া ছিল না। শিশুটির বাবা তাকে ফেরত নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, নবজাতকদের জন্য তাদের উন্নত মানের কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে। চিকিৎসকদের উচিত ছিল তাকে সেখানে নিয়ে আরেকটু ভালো করে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের প্রধান মনীষা ব্যানার্জিকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগে শিশুটির জন্ম দেন শাহিনুর বেগম (২৭) নামের এক মা। তাঁদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালঙ্গা গ্রামে। থাকেন ঢাকায় তুরাগের নিসাতনগর এলাকায়। শাহিনুরের স্বামী মো. ইয়াসিন মোল্লা টুঙ্গিপাড়া বিআরটিসিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান এই নবজাতক।

ইয়াসিন মোল্লা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী শাহিনুরকে গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, শাহিনুরের উচ্চ রক্তচাপ আছে, বাচ্চা প্রসব না হওয়া পর্যন্ত কমবে না। বুধবার রাতেই তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রসব না হওয়ায় তাঁকে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর আজ ভোরে বাচ্চা প্রসব হয়।

ইয়াসিন বলেন, চিকিৎসকেরা তাঁর বাচ্চাকে মৃত ঘোষণার পর দেহটি প্যাকেটে মুড়িয়ে তাঁকে দিয়ে দেন। এরপর তিনি আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যান। সেখানে কবর দিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা লাগে। সেই টাকা সঙ্গে না থাকায় কবরস্থানের লোকজনের পরামর্শেই সকাল নয়টার দিকে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে ৫০০ টাকা ফি দেওয়ার পর নবজাতকটির জন্য কবর খোঁড়া শুরু হয়। দেহটি তাঁর কোলেই ছিল। হঠাৎ ওই প্যাকেট নড়তে থাকে এবং এর ভেতর কান্নার শব্দ শুনতে পান। ইয়াসিন প্যাকেট খুলে দেখেন, তার বাচ্চা জীবিত। তিনি বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন আশপাশের লোকজনও জড়ো হয়ে যান। তিনি নবজাতককে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে ফেরত আসেন। ইয়াসিন জানান, মৃত ঘোষণা করে যে সনদটি দেওয়া হয়েছিল, সেটি তিনি ফেরত আসার পর চিকিৎসকেরা নিয়ে গেছেন।