নতুন ওয়ার্ডে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি

বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক–মুখ চেপে হাঁটতে হয় পথচারীদের। গতকাল কাজলায়। ছবি: প্রথম আলো
বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক–মুখ চেপে হাঁটতে হয় পথচারীদের। গতকাল কাজলায়।  ছবি: প্রথম আলো

ঈদের পর দুদিন পেরিয়ে গেলেও দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলো থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি। এসব বর্জ্য বৃষ্টিতে সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে যে কয়টি স্থানে পশুর অস্থায়ী হাট বসেছিল, সেখানেও বর্জ্য স্তূপ হয়ে রয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কোরবানির পশু জবাইয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) কোনো ব্যবস্থাপনা ছিল না। যে যাঁর মতো নিজের সুবিধাজনক স্থানে পশু কোরবানি দিয়েছেন। ফলে এখন বর্জ্য রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন তা পরিষ্কারও করছে না।

আর ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি এ অব্যবস্থাপনার জন্য জনবল ও অর্থসংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। সংস্থা দুটি জানিয়েছে, হাট এলাকার বর্জ্য অপসারণ করতে তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ ও জনবল না থাকায় নতুন ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণে আপাতত তাদের কিছু করার নেই।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করে ডিএনসিসিতে যুক্ত করা হয়। আর শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে ভেঙে ডিএসসিসিতে যুক্ত করা হয়। দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে নতুন ওয়ার্ডে এখনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিতে পারেনি ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি।

কোরবানির বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের ঘোষণা দেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঘোষণা অনুযায়ী, পুরোনো ওয়ার্ডগুলো থেকে অধিকাংশ বর্জ্যই দ্রুত অপসারণ করা হয়েছে। ভিন্ন চিত্র নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে।

গতকাল বিকেলে ডিএসসিসির নতুন ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় (কাজলা, শনির আখড়া ও দনিয়া কলেজ হাট) এলাকায় পশুবর্জ্য ছড়িয়ে রয়েছে। এখানে ডিএসসিসি হাট ইজারা দিয়েছিল। কিন্তু পরে হাটের বর্জ্য অপসারণ করেননি ঠিকাদার। বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। এ ছাড়া কাজলা রোড, দক্ষিণ শেখদীসহ ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন রোডে কোরবানির বর্জ্য ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

শনির আখড়া ও দনিয়া হাটের ইজারাদারের নাম মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণে পর্যাপ্ত ট্রাক ও জনবল পাননি। এ জন্য দেরি হচ্ছে।’

>

পুরোনো ওয়ার্ডগুলো থেকে অধিকাংশ বর্জ্যই দ্রুত অপসারণ করা হয়েছে
তবে ভিন্ন চিত্র নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে

কাজলা রোডের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, ডিএসসিসির পুরোনো ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের (যাত্রাবাড়ী ও কুতুবখালী) পাশেই নতুন ৬২ নম্বর ওয়ার্ড অবস্থিত। ওই এলাকায় খানিকটা ঘুরলেই পার্থক্য নজরে আসে। পুরোনো ওয়ার্ডের সড়কের কোথাও কোরবানির বর্জ্য নেই। আর নতুন ওয়ার্ডে (কাজলা) এলাকার রাস্তায় বর্জ্যের দুর্গন্ধে হাঁটা যায় না। তিনি বলেন, তাদের এলাকায় সিটি করপোরেশনের কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করে কোথাও ফেলার জায়গাও নেই। ফেলতে হয় আশপাশের ডোবায়।

ডিএসসিসির ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামা শ্যামপুর, ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের গ্যাস রোড, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের দনিয়া রোড, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃধাবাড়ি রোড, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল ও সাদ্দাম মার্কেট এলাকা, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারুলিয়া (হাট) এলাকায় রাস্তায় কোরবানির বর্জ্য স্তূপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর বৃষ্টিতে এসব বর্জ্য আরও ছড়িয়ে পড়েছে।

৬১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে ডিএসসিসির কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। ফলে কোরবানির বর্জ্য এখনো রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে রয়েছে। কবে তা অপসারণ করা হবে, তা জানেন না।

একই অবস্থা ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলোতেও। উত্তরখান ডিএনসিসির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে আদর্শপাড়ার বাসিন্দা রিয়াজুল জান্না বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও যে যার সুবিধাজনক স্থানে পশু কোরবানি দিয়েছেন। কিন্তু তারা যথাযথভাবে বর্জ্য অপসারণ করেনি। বাড্ডা এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একই চিত্র বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ রেজা। তিনি বলেন, বাড্ডা ডিএনসিসির অধীনে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো সুফল পায়নি। এখন এই এলাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তাতেই পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে আছে। তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা পরিষ্কার করছে না।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের আয়তন ডিএসসিসির আগের ৫৭টি ওয়ার্ডের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বড়। অথচ এখন পর্যন্ত এসব ওয়ার্ডে জনবল, অর্থ বরাদ্দ করেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে এসব ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর মতো সক্ষমতা নেই। একই মন্তব্য ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের।