কলাবাগানে স্কুলছাত্রী হত্যা

ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু

প্রতীকী ছবি
 প্রথম আলো

রাজধানীর কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ওই কিশোরীর (১৭) শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন ময়নাতদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে কিশোরীটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে স্কুলছাত্রীটির মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রীটি বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছে।  মেয়েটিকে উত্তেজক বা নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, তা রাসায়নিক পরীক্ষার নমুনা এবং সে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না, তা জানতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বয়স নিয়ে গরমিল

মামলায় ও পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বয়সের গরমিল থাকায় ময়নাতদন্ত নিয়ে স্কুলছাত্রীর স্বজনেরা ভোগান্তির শিকার হন।

কিশোরীটির মামা প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় তাঁর ভাগনির বয়স ১৭ লেখা হলেও সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে ১৯ বছর। আর এ কারণে ময়নাতদন্তে দেরি হয়। তাঁরা এ নিয়ে দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে ছাত্রীর বয়স নির্ধারণে এক্স–রে করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে কলাবাগান থানার পুলিশকে ডেকে এনে সুরতহাল প্রতিবেদনের বয়স ঠিক করা হয়। এরপর লাশের ময়নাতদন্ত শুরু করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়ায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, মেয়ে হারিয়ে মা-বাবা পাগলপ্রায়।

জবানবন্দি শেষে কারাগারে দিহান

গ্রেপ্তার ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহানকে কলাবাগান থানা থেকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কলাবাগান থানার পুলিশ আনোয়ার খান হাসপাতালে গিয়ে ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহান নামের ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে তরুণটির তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাঁদেরও আটক করে। দিহান মেয়েটির মাকেও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে যেতে ফোন করে জানান, ‘আপনার মেয়ে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আছে।’

কলাবাগান থানার পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলায় দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। আটক দিহানের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

বাসা থেকে আলামত জব্দ

আদালতে দেওয়া তানভীরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আবুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিহানকে মডার্ন হাসপাতাল থেকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি ছাত্রীটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। ওই তরুণ দাবি করেছেন, মেয়েটি তাঁর পূর্বপরিচিত। বাসার সবাই ঢাকার বাইরে থাকায় এ সুযোগে তাকে নিজেদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে প্রাইভেট কারে করে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়েছে। তাঁর বাসার যে কক্ষে ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে আলামত জব্দ করা হয়েছে।


যাচাই হচ্ছে তিন বন্ধুর মোবাইল রেকর্ড


পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় তানভীরের তিন বন্ধু জড়িত কি না, সে বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মুঠোফোনের কল রেকর্ড যাচাই করে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে তানভীরের বাসা থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তার ধারের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এতে তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া না গেলে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের মা-বাবার জিম্মায় দেওয়া হবে।

তবে কিশোরীটির পরিবারের অভিযোগ, দিহান একা নন, তাঁর অন্য তিন বন্ধুও এই অপকর্মে জড়িত।