ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ব্যাপক অপচয় করছেন সমাজের বিত্তবানেরা। এতে পানির সংকটে আছেন নিম্নবিত্তরা। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন না। পানির ব্যবহারে এই অসমতা উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) একটি গবেষণায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইন মিলনায়তনে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই গবেষণায় বলা হয়, জনপ্রতি প্রতিদিন পানির ব্যবহার হওয়া উচিত ১৫০ লিটার। কিন্তু বস্তি এলাকার বাইরে যাঁরা থাকেন, তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ৩১০ লিটার করে পানি ব্যবহার করেন। সবচেয়ে বেশি পানির ব্যবহার হয় গুলশান-বনানী এলাকায়। এসব এলাকার বাসিন্দারা গড়ে ৫০৯ লিটার করে পানি ব্যবহার করেন। আর বস্তির বাসিন্দা বা নিম্ন আয়ের মানুষ প্রতিদিন মাথাপিছু মাত্র ৮৫ লিটার পানি ব্যবহার করে।
মানুষের আয়ের সঙ্গে পানি ব্যবহারের পারস্পরিক সম্পর্ক দেখা গেছে গবেষণায়। যাঁদের মাথাপিছু আয় ৯ হাজার টাকার বেশি, তাঁরা শৌচাগারে ফ্লাশ ও গোসলের সময় ঝরনা ব্যবহার করেন। যাঁদের মাথাপিছু মাসিক আয় তিন হাজার টাকা করে, তাঁরা বেশি আয়ের লোকদের তুলনায় দৈনিক গড়ে ১০০ লিটার কম পানি ব্যবহার করেন।
বিআইজিডির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এই গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের দিনে গড়ে ১৫০ লিটার পানি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু তারা গড়ে প্রতিদিন ৬৫ লিটার পানি কম ব্যবহার করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে পানির সংকটে ভোগে। অথচ উচ্চবিত্তরা যে হারে পানির বিল দেয়, তারাও সেই হারে বিল দেয়।
>একই হারে বিল দেয় উচ্চ ও নিম্নবিত্তরা
কিন্তু নিম্নবিত্তরা চাহিদা অনুযায়ী পানি পায় না আর উচ্চবিত্তরা অপচয় করে
গবেষণায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানির নিম্নমানের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ ব্যবহারকারী পানির বাদামি রং, ২৭ শতাংশ অস্বচ্ছ ও ৪৯ শতাংশ ব্যবহারকারী নোংরা পানি পাওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ওয়াসার পাম্প স্টেশন, বাসাবাড়ির ভূগর্ভস্থ ট্যাংক বা রিজার্ভার ও ছাদের ওপর পানির ট্যাংক থেকে পাঁচটি করে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। পাম্প স্টেশনের পাঁচটি নমুনার একটিতে দূষিত পানি, ভূগর্ভস্থ ট্যাংকের চারটিতে এবং ছাদের ওপর ট্যাংকের পাঁচটি নমুনাতেই দূষণ পাওয়া গেছে।
সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ লাইনের সমস্যার কারণে অথবা ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে এই দূষণ হতে পারে। তিনি নিয়মিত পানির ট্যাংক পরিষ্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
পানি ব্যবহারের এই অসমতা ঠেকাতে এবং অপচয় বন্ধ করতে গবেষণাটিতে বিদ্যুতের বিলের মতো বেশি ব্যবহারে বেশি বিল ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। এতে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকার পানির চাহিদা পূরণ করাটা ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য শিল্পায়ন খুবই প্রয়োজন। আর এটাই পানিদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হলে পানির চাহিদাও বাড়বে। কিন্তু আমরা সেই চাহিদা মেটাতে কতটুকু পারব, সেটাই দেখার বিষয়।’