দেড় বছর পর খুলছে কলেজ, আগের রাতে বিয়ের আয়োজন

বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে শনিবার দুপুরে কলেজ মিলনায়তনে চলছিল আলোকসজ্জাসহ সাজসজ্জার কাজ
ছবি: প্রথম আলো

কলেজে প্রবেশ করে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়ল এলোমেলো করে অনেকগুলো বেঞ্চ একসঙ্গে রাখা। মনে হলো, কাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অংশ হিসেবে বেঞ্চগুলো এভাবে রাখা হয়েছে, যাতে সেখান থেকে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে সাজানো যায়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল, মিলনায়তনে চলছে আলোকসজ্জাসহ সাজসজ্জার কাজ। মনে হলো, কাল খোলা উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য এমনটি করা হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে একপাশে রান্নার বড় আয়োজন দেখে খটকা লাগল।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আসলে কলেজের এক কর্মচারীর ছেলের বিয়ের জন্য এমন আয়োজন চলছে। আজ শনিবার রাতে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা। এটি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত সরকারি বিজ্ঞান কলেজের চিত্র। আগামীকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য যেখানে নানাবিধ প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, সেখানে এমন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই বিরতির পর আগামীকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি দেখতে আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল। এই কলেজের ভেতরেই পৃথকভাবে চলে সরকারি বিজ্ঞান মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আইয়ুব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, একজন কর্মচারী তাঁর সন্তানের বিয়ের এই অনুষ্ঠান আগেই নির্ধারণ করেছিলেন। তাই ‘মানবিক কারণে’ অনুষ্ঠানটি করতে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে ভাঙা যাচ্ছে না। তবে আজকের মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে দেবেন।

বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে শনিবার দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণে হয় রান্না–বান্না

এই অনুষ্ঠান হলেও আগামীকাল ক্লাস শুরুর জন্য ‘পর্যাপ্ত প্রস্তুতি’ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ। তাঁদের কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে মোট আড়াই হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে যাতে ক্লাস হয়, সেভাবেই সময়সূচি সাজিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ক্লাস করানো হবে। তাই সমস্যা হবে না।

কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীদের দুটি আবাসিক ছাত্রাবাস আছে। এগুলোতে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা আছে। একটিতে থাকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আরেকটিতে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তবে আগামীকাল থেকে ক্লাস শুরু হলেও এখনো ছাত্রাবাস খোলা হয়নি।

অধ্যক্ষ জানালেন, যে ছাত্রাবাসে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা থাকে, সেটি ১৪ সেপ্টেম্বর এবং যেটিতে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা থাকে, সেটি ১৫ সেপ্টেম্বর খোলা হবে। খোলার আগে সবাইকে করোনার আরটি–পিসিআর পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া ডাইনিংয়ে বসে আপাতত খাওয়া যাবে না। এ ধরনের কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার শর্তে ছাত্রাবাসগুলো খোলা হচ্ছে।

ছাত্রাবাস খোলার আগে ক্লাস শুরু হওয়ায় ওই সব ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে বলে মনে করছেন কলেজের শিক্ষকেরাও।

ভেতরে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন চলায় বেঞ্চগুলো বাইরে রাখা হয়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, মাত্র দুই দিন আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ছাত্রাবাস খোলাসংক্রান্ত নির্দেশনাটি দিয়েছে। ফলে অল্প সময়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ক্লাস চালুর দুই-তিন দিন পর ছাত্রাবাস খোলা হবে।

ওই দুই ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, একটির সামনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন দুজন কর্মী। আরেকটির সামনে থাকা মাঠে বড় বড় ঘাস উঠেছে।

ছাত্রাবাস নিয়ে দেওয়া নির্দেশনায় মাউশি বলেছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস রয়েছে, সেসব ছাত্রাবাস চালুর ক্ষেত্রে কোভিড-১৯–সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।