পশ্চিম তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড

দায় চাপানোর খেলায় ভুগছে মানুষ

>

ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছরের বর্ষায় িনয়মিতভাবে জলাবদ্ধতার শিকার ১৫টি এলাকা চিহ্নিত করেছে প্রথম আলো। এই বর্ষায় ওই এলাকাগুলোকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচাতে সিটি করপোরেশন কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা কতটুকু কার্যকর হবে, নাকি এবারও ডুববে সেসব এলাকা এবং ভুগতে হবে নগরবাসীকে? তার খোঁজখবর নিয়েই এই আয়োজন।

পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা সংস্কার না করায় একটু বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায় গার্ডেন রোডে। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো
পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা সংস্কার না করায় একটু বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায় গার্ডেন রোডে। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো

এক পশলা বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পশ্চিম তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড এলাকা। ছয় বছর ধরে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু জলাবদ্ধতা দূর করার কাজ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট যে দুই প্রতিষ্ঠান কাজ করবে, তাদের মধ্যেই চলছে পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর খেলা।

ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। ফলে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই অতিরিক্ত পানি নালা দিয়ে যেতে পারে না। নালার অনেক জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উল্টো নালার পানিই ম্যানহোল দিয়ে ওপরে উঠে আসে। তাতে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

রাজধানীতে পয়োনিষ্কাশন নালা দেখভালের দায়িত্ব এককভাবে ওয়াসার। আর স্থানভেদে বৃষ্টির পানি চলাচলের নালার দেখভাল করে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে। তেজতুরী বাজারে একই নালা দিয়ে বৃষ্টির পানি ও পয়োনিষ্কাশন চলাচল করে। ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর থেকেই এই এলাকায় কারা কাজ করবে, সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ওয়াসা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ওয়াসা বলছে, ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এই এলাকা ডিএনসিসির মধ্যে পড়েছে, তাই নালা তৈরি কিংবা মেরামতের কাজ এখন তাদের। আর ডিএনসিসি বলছে, এই এলাকার পয়োনিষ্কাশনের জন্য ওয়াসা এখনো কর আদায় করে। ফলে এটি দেখার কাজ ঢাকা ওয়াসার।

পশ্চিম তেজতুরী বাজার ডিএনসিসির অঞ্চল–৫–এর অন্তর্ভুক্ত। নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হোসেন বলেন, ওয়াসার এই নালা পুরোনো আর সরু হওয়ায় বৃষ্টি হলে এই এলাকায় যে পরিমাণ পানি জমে, তা প্রবাহিত হতে পারে না। এর ওপর নালা অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই এলাকার জলাবদ্ধতা হ্রাসে কারা কাজ করবে, সে বিষয়ে ওয়াসার সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসা হবে। আর নাম না প্রকাশের শর্তে ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এই এলাকার নালার সংস্কারকাজ নিয়ে ওয়াসার কোনো পরিকল্পনা নেই।

২৬ জুলাই ২০১৭: ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় গার্ডেন রোড। বুকসমান পানির ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হয় বাসিন্দাদের। ফাইল ছবি

অঞ্চল–৫ সূত্রে জানা যায়, আগে এই এলাকার পানি পান্থপথে ওয়াসার বক্স কালভার্টে যেত। তখন এই এলাকায় জলাবদ্ধতা হতো না। কিন্তু ভুলক্রমে ওয়াসা নালাটি তেজতুরী বাজারের আবদুল হালিম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার ওপর দিয়ে নিয়ে যায়। ওই জায়গায় নতুন ভবন নির্মিত হওয়ায় নালাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে এই এলাকায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখন বৃষ্টির পানি খুব ধীরগতিতে এ্যাঞ্জেলের গলি হয়ে গ্রিন রোডের ডিএনসিসির অংশের নালায় গিয়ে পড়ে।

নাম না প্রকাশের শর্তে অঞ্চল–৫–এর এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরে এই এলাকার জলাবদ্ধতা হ্রাসে দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাসের সম্ভাবনা আছে। এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিম তেজতুরী বাজারে নতুন করে বৃষ্টির পানিপ্রবাহের নালা তৈরি করা হবে।

গত বছরের বর্ষা মৌসুমেও এই এলাকা ডুবে গিয়েছিল। এ বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই দু–এক পশলা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানি জমে বসুন্ধরা শপিং মলের পেছনের ৩ নম্বর গেট অংশে। ভারী বৃষ্টি হলে বুকসমান পানি জমে। আর দু-এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি জমে হাঁটুর ওপর পর্যন্ত। নালার নোংরা পানিও ওপরে উঠে এসে ঢুকে যায় বাসা ও দোকানের ভেতর।

বসুন্ধরা শপিং মলের ৩ নম্বর গেটের পার্কিং জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টির সময় গেটে বস্তা দিয়ে উঁচু করে রাখা হয়, যাতে পানি ভেতরে আসতে না পারে। কিন্তু অনেক সময় তাতেও কোনো কাজ হয় না।

গার্ডেন রোড এলাকায় ১২ বছর ধরে বসবাস করেন ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, এই এলাকায় ছয় বছর ধরে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এর আগে বৃষ্টি হলে অল্প সময়েই নেমে যেত। এখন ভারী বৃষ্টি হলে পানি নামতে সারা দিন সময় লাগে। দুর্ভোগ অবর্ণনীয় অবস্থায় পৌঁছায়। তখন রিকশা-ভ্যান দিয়ে জলমগ্ন সড়ক পার হতে হয়।