ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি। উভয় সিটিতেই বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণে বর্তমান করপোরেশনের মেয়াদ শেষ না হলে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। ফলে মেয়রের দায়িত্ব পেতে শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম এবং কাউন্সিলরদের প্রায় সাড়ে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম পদত্যগ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ সময়টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চলবে নির্বাচিত মেয়র ছাড়াই।
১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শিগগিরই নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি। যদিও এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া নেই। গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যেই শপথ নিতে হবে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের। শপথ নিলেও আইনি বাধার কারণে দায়িত্ব বুঝে নিতে বর্তমান করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ বলছে, করপোরেশন গঠনের পর এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মে হয় ডিএনসিসির প্রথম সভা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রথম সভা হয় ১৭ মে।
ডিএসসিসির মেয়র পদে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপস গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, আগের নির্বাচিত মেয়রের যে মেয়াদ, তা সম্পন্ন করতেই হবে।
জানা গেছে, আইন অনুসারে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত ডিএসসিসির মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করবেন সাঈদ খোকন। আর ডিএনসিসিতে বর্তমানে কোনো মেয়র নেই। নির্বাচনে অংশ নিতে তফসিল ঘোষণার পর গত ৩০ ডিসেম্বর মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন আতিকুল ইসলাম। তাঁর পরিবর্তে প্যানেল মেয়র থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাইকে মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল সোমবার পর্যন্ত নতুন করে আর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সিটি করপোরেশন আইনের ২১ ধারায় আছে, ‘পদত্যাগ, অপসারণ অথবা মৃত্যুজনিত কারণে মেয়রের পদ শূন্য হলে শূন্য পদে নবনির্বাচিত মেয়র কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়রের প্যানেলের কোনো সদস্য মেয়রের সকল দায়িত্ব পালন করিবেন।’ ডিএনসিসির তিন প্যানেল মেয়রের মধ্যে ওসমান গণি মারা গেছেন। আর বাকি দুই প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা ও আলেয়া সারোয়ার নতুন করে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছেন। যদিও পদে থেকে নির্বাচন করতে বাধা নেই তাঁদের।
আইন অনুসারে করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ছয় মাসের (১৮০ দিন) মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মেয়াদের শেষের দিকে নির্বাচন হলে কোনো জটিলতা থাকে না। নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে মেয়াদের শেষের দিকে। অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতেও নির্বাচনের পর বেশি সময় বাকি ছিল না। তাই এমন শূন্যতার বিষয়টি সামনে আসেনি। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন একটু আগে হয়ে যাওয়ায় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর পুরোনোদের দায়িত্ব পালন করে যাওয়াটা অস্বস্তিকর। আর নির্ধারিত সময়ের আগে পদত্যাগ করলে তো শূন্যতা তৈরি হয়। ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবারের নির্বাচন একটু আগেই হয়ে গেছে। আইন সংশোধন করে দায়িত্ব পালনের বিষয় আরও স্পষ্ট দরকার, যাতে শূন্যতা তৈরি না হয়।