রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে একটিমাত্র বিশ্রামাগার। সেখানে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। অধিকাংশ যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ ছাড়া স্টেশনটিতে যাত্রীদের জন্য নেই পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা। অথচ এই স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন কয়েক হাজার যাত্রী।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রেনযাত্রীরা বলেছেন, রেলস্টেশনে পানি, টয়লেট ও পর্যাপ্ত বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করলে ট্রেনে করে রাজধানীর কমলাপুর ও উত্তরা যেতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন যাত্রীরা। ট্রেনে এ দুটি স্থানে খুব অল্প সময়ে যাওয়া যায়। খরচও কম। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি এবং রাজধানীর যানজটও কমে আসবে। এই স্টেশনে প্রতিদিন ১৩ জোড়া লোকাল ট্রেন থামে।
যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তেজগাঁও রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশনে পানি ও নারীদের জন্য পৃথক বিশ্রামাগার এবং টয়লেটের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্রামাগারে একটি তালা লাগানো টয়লেট আছে। যাত্রীরা চাইলে চাবি দেওয়া হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, তেজগাঁও রেলস্টেশনে যাত্রীদের জন্য ১৫ আসনের মাত্র একটি বিশ্রামাগার (দ্বিতীয় শ্রেণি) আছে। এতে গাদাগাদি করে বসে আছেন প্রায় ৩০ জন যাত্রী। বিশ্রামাগারে থাকা নারী-পুরুষদের জন্য ব্যবহৃত একমাত্র টয়লেটে তালা লাগানো। বিশ্রামাগারে জায়গা না পেয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন শ দুয়েক যাত্রী। প্ল্যাটফর্মটি প্রায় চারদিক থেকেই খোলা। বিভিন্ন স্থানে শুয়ে-বসে আছেন ভাসমান মানুষ। আর প্ল্যাটফর্মের উত্তর পাশে আছে আবর্জনার ভাগাড়। তা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়া স্টেশনের কোথাও যাত্রীদের জন্য নেই খাবার ও হাত-মুখ ধোয়ার পানির ব্যবস্থা।
স্টেশনের বিশ্রামাগারে বসে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন সালমা বেগম। তিনি বলেন, ট্রেনে করে প্রায়ই কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এই স্টেশনে নারী-পুরুষের জন্য পৃথক বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়।
রেলস্টেশনে হাত-মুখ ধোয়ার পানি খুঁজছিলেন তানভির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে সারা দিন হাত-মুখ ধোয়ার সময় পাইনি। ভাবছিলাম স্টেশনে এসে একটু ফ্রেশ হব। কিন্তু এখন দেখি পানির ব্যবস্থা নাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলস্টেশনের এক কর্মচারী বলেন, স্টেশনের কর্তব্যরত লোকেরা বিশ্রামাগারে থাকা টয়লেটটি ব্যবহার করেন, যা সব সময়ই তালা দেওয়া থাকে। জরুরি প্রয়োজন হলে স্টেশনের লোকদের কাছ থেকে যাত্রীদের টয়লেটের চাবি সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় তাদের খুঁজে পাওয়াও যায় না। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারী যাত্রীরা।
তেজগাঁও রেলস্টেশন সূত্র জানায়, রাজধানীর কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ছেড়ে আসা তুরাগ-১, তুরাগ-৭, কর্ণফুলী, বলাকা, ডেমু-১, ডেমু-৩, ঈশা খাঁ, মহুয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ভাওয়াল, সুরমা মেইল, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও এক্সপ্রেস নামে ১৩টি ট্রেন (লোকাল) তেজগাঁও রেলস্টেশনে থামে। এসব ট্রেন জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ভৈরব, মোহনগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে যাত্রী নিয়ে এসে আবার এই স্টেশনে থামে। এই স্টেশন থেকে অধিকাংশ যাত্রীই কমলাপুর ও বিমানবন্দর (উত্তরা) স্টেশনে যাতায়াত করেন।
তেজগাঁও রেলস্টেশনে যাত্রীদের যাতায়াত প্রসঙ্গে স্টেশনমাস্টার এম এ আজিজ বলেন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম প্রায় চারপাশ থেকে খোলা থাকায় অনেক যাত্রীই টিকিট ছাড়া ট্রেনে যাতায়াত করেন। ফলে প্রতিদিন কত যাত্রী যাতায়াত করেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।