তুরাগ চ্যানেল খননকাজ নিয়ে গড়িমসি

দুর্বৃত্তদের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পাহারা বসিয়ে খননকাজ চলছে তুরাগ চ্যানেলে। গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
দুর্বৃত্তদের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পাহারা বসিয়ে খননকাজ চলছে তুরাগ চ্যানেলে। গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত সময় পার হলেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তুরাগ চ্যানেলের খননকাজ এখনো শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কবে এই কাজ পুরোপুরি শেষ হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খনন শুরুর পর থেকেই নানা ধরনের জটিলতার কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আবার কেউ কেউ বলছেন, যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে বিআইডব্লিউটিএর উদাসীনতা ছিল।

সংস্থাটির অভিযোগ, বছিলা এলাকার তুরাগতীরে আমিন মোমিন হাউজিং নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান তুরাগের একটি চ্যানেল ভরাট করে আবাসন গড়ে তুলেছিল। নদ ভরাটের পর সেখানে প্লট বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেখানে নির্মিত সব স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়।

জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ভরাট করা তুরাগ চ্যানেলে অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। এরপর ৬ মার্চ সেখানে খননকাজ শুরু হয়। তখন সংস্থাটি বলেছিল, সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে খননকাজ শেষে ওই পথ জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনো তা শেষ করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম এবং কয়েকজন আনসার সদস্যের উপস্থিতিতে একটি এক্সকাভেটর দিয়ে খননকাজ চলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দুর্বৃত্তদের কারণে খননকাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তাই আনসার সদস্যদের নিয়ে পাহারা বসিয়ে কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, দিনে এক্সকাভেটর দিয়ে ওপরের মাটি অপসারণ করা হচ্ছে। আর রাতে দুটি ড্রেজার দিয়ে পানির নিচের মাটি অপসারণ করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ভরাট করা তুরাগ চ্যানেলের আয়তন প্রায় ১৩ একর। চ্যানেলটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে প্রায় আট লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করতে হবে। গত তিন মাসে প্রায় পাঁচ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এসব মাটি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অপসারণ করা হয়েছে। এখন নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাকি মাটি অপসারণের কাজ চলছে।

খননপ্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বছিলা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই রাতে ড্রেজার বন্ধ থাকে। শুরু থেকেই কাজে গড়িমসি চলছে। ঠিকভাবে কাজ হলে দুই মাসের মধ্যেই শেষ হতো। এত দিনে চ্যানেল দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারত। তবে বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, রাতে ড্রেজার দিয়ে খনন শুরু করলে দুর্বৃত্তরা ড্রেজারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করত। তাই ড্রেজার পরিচালনাকারীরা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হতেন। তবে বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ পাহারা বসিয়ে খননকাজ শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, খোদ রাজধানীর বুকে নদী খননকাজ নিয়ে এমন অবস্থা হলে সারা দেশে খননের চিত্র কেমন হতে পারে, তা এই কাজ দেখেই অনুমান করা যায়।

যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খননকাজ ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তারাই এর সদুত্তর দিতে পারবে।

ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নদীর  তলদেশে অতিরিক্ত বর্জ্য থাকার কারণে প্রায়ই ড্রেজারের দাঁত ভেঙে যাচ্ছে। তাই খননকাজে গতি আসছে না। তবে ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে পুরো কাজ শেষ হতে পারে।