তিন বছর পর ঢাকা শহরে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান নিয়ে আর সমস্যা থাকবে না। আজ সোমবার এ কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তাকসিম এ খান এমন কথা বলেন।
ওয়াসার এমডি বলেন, ঢাকা ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তা উৎসে নিরাপদ থাকে। কিন্তু সরবরাহ লাইনে ত্রুটি কিংবা পানির ট্যাংক নোংরা (বাড়িতে) থাকার কারণে পানির মান নিয়ে সমস্যা হয়। এ সমস্যা কাটাতে ঢাকা শহরকে ১৪৫টি ক্লাস্টারে (ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া বা ডিএমএ) ভাগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬৪টি ডিএমএর কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ডিএমএর কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর আর পানির মান নিয়ে সমস্যা থাকবে না। তিনি জানান, ডিএমএ এলাকায় সব লাইন পরিবর্তন করে এমন লাইন বসানো হচ্ছে, যার মাধ্যমে পানি দূষিত হওয়ার আর শঙ্কা থাকবে না।
নগরে নিরাপদ পানি সরবরাহের পাশাপাশি পয়োনিষ্কাশন এখন ঢাকা ওয়াসার মূল দায়িত্ব। এই দুই দায়িত্বের সঙ্গে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২৬টি খাল এবং প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার নালার রক্ষণাবেক্ষণ করত সংস্থাটি। গত ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বে থাকা খাল, নালাসহ সমগ্র ‘ড্রেনেজ সিস্টেম’ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই হস্তান্তর নিয়েই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আজকের মতবিনিময় সভা আয়োজন করে ওয়াসা।
সভায় তাকসিম এ খান জানান, ১৯৬৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব পায় ঢাকা ওয়াসা। ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসাকে দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব ভুলবশত ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছিল, এটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য ২০১২ সালেই ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তরের জন্য চিঠি দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা।
গত ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের জন্য দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে হস্তান্তরের সমঝোতা স্মারক সই হয়। অচিরেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনা করে জলজট থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাকসিম এ খান।
একসময় ঢাকা শহরে ছোট-বড় শতাধিক খাল ছিল। প্রাকৃতিকভাবেই ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি নদীতে গিয়ে পড়ত। ধীরে ধীরে খালগুলো দখল, ভরাট বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
বেঁচে থাকা খালগুলোর মধ্যে ২৬টি খালের রক্ষণাবেক্ষণ করত ঢাকা ওয়াসা। এই খালগুলো কী অবস্থায় সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলো—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, একটি খালের বহুবিধ ব্যবহার আছে। তাঁর মতে, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি একটি খাল সুন্দর জলাশয় (বিনোদনের জায়গা), নৌপথ বা দুই ধারে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে হাঁটার জায়গা হতে পারে। কিন্তু ওয়াসা শুধু বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য খালের ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং প্রয়োজনে খালের গভীরতা বাড়ানোর কাজ করেছে। খাল নিয়ে আলাদা কোনো বাজেটও ওয়াসার ছিল না।
মতবিনিময় সভায় ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন, পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মাহমুদ হোসেন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।