কম খরচে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন নিম্নমানের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছিল দালাল চক্র। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকা মেডিকেলে অভিযান চালিয়ে ওই তথ্যের সত্যতা পেয়ে ২৩ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে র্যাব-৩–এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকা মেডিকেলে অভিযান চালান। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলা অভিযানে হাসপাতালটির একাধিক কর্মকর্তা ও র্যাব-৩–এর একটি দল অংশ নেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক ৩০ ব্যক্তির মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগানোর অভিযোগের সত্যতা পান। এর দায়ে তাঁদের প্রত্যেককে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু আজ প্রথম আলোকে বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ২৩ জনকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে দালালির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এর আগেও একই ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকায় দায়ে জেল খেটেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অসহায় ও গরিব রোগীদের কম খরচে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ঢাকা মেডিকেলের আশপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন নিম্নমানের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানে রোগীদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিলেও কোনো চিকিৎসাও পাননি বলে আজ দুজন রোগী ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অভিযোগ করেন।
র্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ঢাকা মেডিকেলে রোগী নামার সঙ্গে সঙ্গে আটক দালালেরা রোগীদের পিছু নিতেন। তাঁরা রোগী চিকিৎসার জন্য টিকিট কাটলেও চিকিৎসকের কক্ষে যেতে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি করতেন। দালালেরা রোগীদের প্রলোভন দিয়ে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার জন্য তাঁদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতেন।
রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অভিযোগের সূত্র ধরে নিম্নমানের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব-৩–এর পরিচালক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাবের গোয়েন্দারা ১০–১২ দিন ধরে নজরদারি করে দালালদের শনাক্ত করেন। এরপরই আজ র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযান
ঢামেকে দিনভর র্যাবের অভিযানের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযানে পাঁচ নারীকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে তাঁদের শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আটক পাঁচজন হলেন শাহনাজ আক্তার (৩১), তাসলিমা বেগম (৪০), তাসলিমা আক্তার (৩০), ইয়াসমিন আক্তার (৩০) ও সাথী আক্তার (৩০)।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচজন নারী দালালকে আটক করে থানায় দিয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা করবে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানিয়েছেন, হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে ও হাসপাতালের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।