ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম মোহাম্মদ রায়হান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে স্নাতকে অধ্যয়নরত এবং ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। তাঁকে মারধরে অভিযুক্ত এসবির এএসআইয়ের নাম আবদুর রব।
এর আগে আজ বিকেলে রাস্তা পার হওয়ার সময় ওই সাংবাদিককে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেন আবদুর রব। সাংবাদিক রায়হান এর কারণ জানতে চাইলে ওই এএসআই তাঁকে মারধর করেন। বিকেলের ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ জানান, আবদুর রবকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে একটি সংবাদ সম্মেলনের খবর সংগ্রহ শেষে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তিনি মাঠ থেকে বের হন। কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময় এসবির সদস্য আবদুর রব তাঁকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেন।
এ ঘটনার খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবিরসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও রায়হানের সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিমও সেখানে যান। আবদুর রব তখন পুলিশি নিরাপত্তায় বহির্বিভাগের ফটকে অবস্থিত পুলিশ বক্সে ছিলেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে রায়হানের সহপাঠীদের কয়েক দফায় বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
পরে ডিএমপির রমনা অঞ্চলের এডিসি হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশি নিরাপত্তায় আবদুর রবকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়।
মারধরের ঘটনা নিয়ে সন্ধ্যায় থানায় আলোচনায় বসে পুলিশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। আলোচনা শেষে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত আবদুর রবকে এসবি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনার তদন্তও হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি যেন যথাযথ আচরণ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সেই আহ্বান জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর গায়ে হাত ওঠানোর এই ঘটনাকে পুলিশ অপরাধ হিসেবেই দেখছে। এটা স্পষ্ট হয়েছে, এসবির ওই সদস্য দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন না। এটি তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা। এ ঘটনার জন্য ডিএমপির রমনা অঞ্চলের এডিসি হারুন অর রশীদ পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ এ বিষয়ে এসবির ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কথা বলে আমাদের জানিয়েছেন, ওই এএসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত হবে এবং তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় মোহাম্মদ রায়হান শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।’