রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে চাপ তৈরি হচ্ছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যাও কমে আসছে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসকেরা গুরুতর রোগীকে আইসিইউতে নেওয়ার জন্য বললেও শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে রোগীর বাড়তি চাপ সামলানো নিয়ে সংশয় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে ৩টি হাসপাতালে আইসিইউ নেই। বাকি ১৩টি হাসপাতালের মধ্যে ৭টি হাসপাতালেই গতকাল শুক্রবার কোনো আইসিইউর শয্যা ফাঁকা ছিল না। আর ৬টি হাসপাতালে ফাঁকা ছিল ৪২টি। এর আগে ১৭ জুলাই ৫টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি ছিল ৬৫টি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, সাধারণ শয্যা, আইসিইউ ইতিমধ্যে রোগীতে পূর্ণ। শয্যাসংখ্যা বাড়িয়েও রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। সকালে ৪০ জন রোগী ছাড়া পেলে দেখা যায়, বিকেল নাগাদ আরও ৮০ জন রোগী হাসপাতালে এসে ভর্তির অপেক্ষায়। আগস্টে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন এমন ১৫-২০ জন রোগী সব সময় অপেক্ষমাণ থাকছে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
গতকাল সকালে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার খুরশীদ আলম। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব কি না, তা এখন বুঝতে পারছি না। অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আগের দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তেমন ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। তবে সীমান্তবর্তী জেলায় সংক্রমণ কমেছে। তবে আরও কিছুদিন পরে বিধিনিষেধের প্রভাব বোঝা যাবে।’
রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে
ঈদের ছুটির সময়ে দেশে করোনা পরীক্ষা কম হয়েছে। রোগী শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনগুলোর চেয়ে কম হয়েছে। মৃত্যুও কিছুটা কমেছে। তবে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত চার দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭২৬ জনের। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২৫৪ জনের। এই সময় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩০ শতাংশের মতো। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত) মোট ২০ হাজার ৪৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৪ জন। করোনায় মৃত্যু আগের দিনের চেয়ে কমলেও শনাক্ত রোগী প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫১ জনের। করোনা শনাক্ত হয়েছে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৬ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৩৩ জন করে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মতো পদক্ষেপের প্রভাব কতটুকু, তা বোঝা যায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে। সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করলে ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সরকার। কিন্তু সংক্রমণচিত্রে কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। এরই মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঈদ সামনে রেখে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। গতকাল থেকে আবার ১৪ দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ থাকছে। ঈদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, হাটে লোক সমাগমের প্রভাব আরও দুই সপ্তাহ পর সংক্রমণে দেখা যাবে। বিধিনিষেধে যান চলাচল বন্ধ থাকছে, কিন্তু স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই। স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই বিধিনিষেধ শেষেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।