কপালে টিপ পরায় লতা সমাদ্দার নামের এক নারীকে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্য ডিএমপির প্রোটেকশন বিভাগে কাজ করেন।
আজ সোমবার ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিপ্লব কুমার সরকার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অভিযুক্ত বলেছেন, তেজগাঁও কলেজের ওখানে একটি ঘটনা ঘটেছে। এখন যথাযথ তদন্ত হবে। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘অভিযুক্ত যেহেতু ডিএমপির প্রোটেকশন বিভাগের, তাই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা ওই বিভাগ ঠিক করবে। তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সকালে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম বড়ুয়া বলেন, ওই পুলিশ সদস্যের নাম নাজমুল তারেক।
কপালে টিপ পরায় গত শনিবার ঢাকার রাস্তায় হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানান রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এ বিষয়ে শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
লতা সমাদ্দার ওই দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হেঁটে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম। হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন “টিপ পরছোস কেন” বলেই বাজে গালি দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম তাঁর গায়ে পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর বসে আছেন। প্রথম থেকে শুরু করে তিনি যে গালি দিয়েছেন, তা মুখে আনা, এমনকি স্বামীর সঙ্গে বলতে গেলেও লজ্জা লাগবে। ঘুরে ওই ব্যক্তির মোটরবাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখনো তিনি গালি দিচ্ছেন। লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। একসময় আমার পায়ের পাতার ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান।’
এ ঘটনায় মাঠপর্যায়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদে সোচ্চার হন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নারী-পুরুষ। গতকাল রোববার এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে সমাবেশ হয়েছে। নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিবৃতি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেও লতা সমাদ্দারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘টিপ পরা আমার স্বাধীনতা’।
গতকাল জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না? এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, এমনকি সে বিবাহিত না বিধবা, সেটা বিষয় নয়। একটি মেয়ে টিপ পরেছে। তিনি একজন শিক্ষক। রিকশা থেকে নামার পর দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার ইভ টিজ করেছে।’