বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে তাঁর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংবাদিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জানাজার আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান আইন, সংবিধান, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখে গেছেন। এই লেখনীর মধ্য দিয়ে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণের জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের মরদেহ কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আনা হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
তার আগে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রাঙ্গণে মিজানুর রহমান খানের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার জানাজায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্তমান ও সাবেক নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকেরা জানাজায় অংশ নেন। সেখানেও জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সকাল ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে মিজানুর রহমান খানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানাজায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী ও সাংবাদিকেরা অংশ নেন। জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মিজানুর রহমান খানকে আজ রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিজানুর রহমান খান মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি মা, স্ত্রী, তিন সন্তান, পাঁচ ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মিজানুর রহমান খান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর নমুনা পরীক্ষায় গত ২ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি ৫ ডিসেম্বর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শারীরিক সমস্যা বাড়লে সেখান থেকে ১০ ডিসেম্বর তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন ও দল। অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানিয়েছেন। শোকবার্তায় বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, আইন বিষয়ে লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় মিজানুর রহমান খান ছিলেন পথিকৃৎ। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন একজন নীতিমান সাংবাদিক।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারের সপক্ষে জনমত গঠনে তিনি ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ, ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল ও মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ১৯৬৭ সালের ৩১ অক্টোবর ঝালকাঠির নলছিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ১৯৮৮ সালে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতায় থাকা মিজানুর রহমান খান ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুগান্তর-এর বিশেষ সংবাদদাতা ও সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এরপর সমকাল-এ উপসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। প্রথম আলোয় যোগ দেন ২০০৫ সালের ১ নভেম্বর।
মিজানুর রহমান খানের দুই ভাইও সাংবাদিক। তাঁরা হলেন সিদ্দিকুর রহমান খান ও মসিউর রহমান খান।