ই–ট্রাফিকিং

জরিমানার টাকা দিতে কমেছে ভোগান্তি

■২০১৪ সালে এই সেবা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা দেশের বেশির ভাগ জায়গায় বিস্তৃত হয়।

■ সারা দেশে ২০২১ সালে মোটরযান আইনে মোট ৭ লাখ ২০ হাজার ৮৯৩টি মামলা হয়।

■ এসব মামলায় ১৫৪ কোটি ১৫ লাখ ১১ হাজার ৪৮৮ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মোটরযান আইনে মামলার জরিমানার টাকা দিতে এখন আর ট্রাফিক কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে না। দাঁড়াতে হচ্ছে না দীর্ঘ লাইনে। মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জরিমানার টাকা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে ফেরত পাওয়া যাচ্ছে গাড়ির কাগজপত্রও।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও মোটরযান আইন যথাযথ বাস্তবায়নে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী চালক ও গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা-জরিমানা হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। মামলা নিষ্পত্তি করতে বা কাগজপত্র ফেরত আনতে জনগণকে নানা ভোগান্তিতে পড়ত হতো। কিন্তু ই-ট্রাফিকিং সেবা চালুর পর এই ভোগান্তি নেই বললেই চলে।

২০১৪ সাল থেকে এই সেবা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা দেশের বেশির ভাগ জায়গায় বিস্তৃত হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) মো. হায়দার আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোগান্তি এড়াতে রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে ই-ট্রাফিকিং সেবা চালু রয়েছে। এখন ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধে মামলা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনলাইনে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মামলার নিষ্পত্তি করতে পারছেন। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে, ভোগান্তি কমছে। পুলিশের মূল উদ্দেশ্য, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো। আর এ জন্য সড়কে চলাচলকারী চালক ও পথচারী সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এখন ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধে মামলা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মামলার নিষ্পত্তি করতে পারছেন। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে, ভোগান্তি কমছে।
মো. হায়দার আলী খান উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা), পুলিশ সদর দপ্তর

পুলিশ সূত্র জানায়, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, ট্রাফিক পুলিশের আদেশ অমান্য করা, বাধা সৃষ্টি ও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো, উল্টো পথে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা—এসব অপরাধে মোটরযানে আইনে মামলা করা হয়। এ ছাড়া গাড়ি চলন্ত অবস্থায় কালো ধোঁয়া বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে জেল–জরিমানা করতে পারেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি–ট্রাফিক ) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরে (২০২১) ডিএমপিতে মোটরযান আইনে দুই লাখ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হওয়া জরিমানার প্রায় ৪০ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকারি তহবিলে জমা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ২০২১ সালে মোটরযান আইনে মোট ৭ লাখ ২০ হাজার ৮৯৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় ১৫৪ কোটি ১৫ লাখ ১১ হাজার ৪৮৮ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

কিছু অভিজ্ঞতা

২০১৩ সালের একটি অভিজ্ঞতার কথা বললেন মিরপুর ২ নম্বরের বাসিন্দা আশিকুর রহমান। মিরপুর–১ নম্বরের রাস্তায় যানজট থাকায় তিনি সনি সিনেমা হলের সামনে দিয়ে উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আইন ভঙ্গ করায় মামলা দিয়ে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। জব্দ করে নিয়ে যান তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স। এক সপ্তাহ পরে মোহাম্মদপুরে ট্রাফিক উপকমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স আনতে বলেন তিনি। আশিকুর বলেন, নির্ধারিত তারিখে উপকমিশনারের কার্যালয়ে জরিমানার টাকা জমা দিতে তাঁকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। দুই ঘণ্টা পর টাকা জমা দিলেও তাঁকে জানানো হয় ড্রাইভিং লাইসেন্সটি পাওয়া যাচ্ছে না। পরে বহু কষ্ট করে তাঁকে আবার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয়েছে।

মাস তিনেক আগে মিরপুর মাজার রোডে সড়কের পাশে ব্যবসায়ী আশফাকউদ্দিন তাঁর গাড়িটি পার্ক করেছিলেন। এ সময় একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে তাঁর গাড়িটির ভিডিও ধারণ করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেন। ট্রাফিক সার্জেন্ট তাঁর গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করে বলেন, জরিমানার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করে এখনই তিনি মামলার নিষ্পত্তি করতে পারেন। আশফাক বলেন, তিনি পাশের দোকানে ইউক্যাশে জরিমানার টাকা জমা দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ফিরে পান।

আশফাক বলেন, ঘটনাস্থলে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় সময় ও খরচ দুই বেঁচেছে। একই সঙ্গে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়নি তাঁকে।

ইট্রাফিকিং ব্যবস্থা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের যুগ্ম কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পিওএস মেশিনে মামলা দিলে তা অনলাইন সিস্টেমে চলে যায়। জরিমানার টাকা সরাসরি সরকারের তহবিলে জমা হয়। তিনি বলেন, আগে মানুষের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, মামলা কিংবা জরিমানার টাকা মনে হয় পুলিশ মেরে দিয়েছে। মানুষের সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।